অঘটনের শিকার আর্জেন্টিনা ; ২-১ গোলে সৌদির কাছে হারলো মেসিরা

Chapai Chapai

Tribune

প্রকাশিত: ৯:৩৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২২, ২০২২

ট্রিবিউন ডেস্ক: কাতার বিশ্বকাপে প্রথম অঘটনের শিকার হয়েছে আর্জেন্টিনা। সৌদি আরবের কাছে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ২-১ গোলে হেরে গেছে লিওনেল মেসির দল।

বিশ্বকাপের আগে টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকা আর্জেন্টিনা হোঁচট খেল এশিয়ান জায়ান্টদের বিপক্ষে। অগোছালো ফুটবল খেলার খেসারত দিয়ে প্রথম ম্যাচেই হারের স্বাদ নিয়েছে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

সৌদিদের হাই লাইন ডিফেন্সের কারণে অফসাইডের ফাঁদে পড়ে তিন গোল বাতিল হলেও ১ গোলের লিড নিয়ে প্রথমার্ধ শেষ করে আর্জেন্টিনা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর ৪ মিনিটের মাথায় ২ গোল হজম করে বসে আলবিসেলেস্তেরা।

সেই ২ গোলের জবাবে ম্যাচের বাকি সময় আর একটিও গোল করতে পারেনি আর্জেন্টিনা। যে কারণে ২-১ গোলের হার দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করতে হয় স্কালোনির শিষ্যদের।

কাতারের লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরু থেকেই সৌদি আরবকে চেপে ধরে আর্জেন্টিনা। বারবার তাদের ব্যর্থ হতে হয়েছে সৌদির অফসাইড ফাঁদে পড়ে।

ম্যাচের দেড় মিনিটের মাথায় আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। ডি বক্সের ভেতর থেকে মেসির নেয়া দুর্দান্ত শট কোনো রকমে ঠেকিয়ে দিয়ে বিপর্যয় সামাল দেন সৌদি গোলকিপার।

ম্যাচের অষ্টম মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে মেসি ফ্রি কিক নেয়ার সময় বক্সের ভেতর ফাউলের শিকার হন লিয়ান্দ্রো পারেদেস। ভিএআর দেখে ফাউলের ঘোষণা দেন রেফারি। আর সেই সুবাদে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা।

সেখান থেকে সফল স্পট কিকের মাধ্যমে ম্যাচের দশম মিনিটে দলকে লিড এনে দেন মেসি। গোল করে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের উল্লাসে মাতানোর পাশাপাশি নিজের শেষ বিশ্বকাপের শুরুটা করেন তিনি।

গোল হজম করে স্কালোনির শিষ্যদের চেপে ধরে সৌদি। ১৩ থেকে ১৬ মিনিটের মাথায় ব্যাক টু ব্যাক বেশ কিছু আক্রমণ চালালেও গোছানো আক্রমণের অভাবে জালের দেখা মেলেনি কোনোবারই।

১৯ থেকে ২২ মিনিটের মাথায় সৌদিদের বক্সে টানা আক্রমণ চালায় আর্জেন্টিনা।

২১ মিনিটের মাথায় পাপু গোমেস শট নেন সৌদির গোলবারে। শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে সুযোগ হাতছাড়া হয় আকাশি নীলদের।

২৩তম মিনিটে মাঝমাঠ থেকে পাওয়া পাস নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে যান মেসি। তিন ডিফেন্ডার ও গোলকিপারকে কাটিয়ে জালের ঠিকানা খুঁজে নিলেও অফসাইডের কারণে বাতিল হয় গোলটি।

২৮ মিনিটের মাথায় ফের অফসাইডের ফাঁদে পড়ে গোল বাতিল হয় আর্জেন্টিনার। ডি বক্সের কাছাকাছি বল পেয়ে যান লাউতারো মার্তিনেসে। সেই বল টেনে নিয়ে একক নৈপুণ্যে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন আর্জেন্টাইন এই ফরোয়ার্ড।

আরও একবার অফসাইডের ফাঁদে পড়ে বাতিল হয় এই গোলটিও।

ম্যাচের ৩৫ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ থেকে মেসির দেয়া পাস ধরে ডি বক্সে ঢুকে যান লাউতারো মার্তিনেস। সেখান থেকে দুর্দান্ত নৈপুণ্যে গোলরক্ষককে ভেলকি দিয়ে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন তিনি। এটিও কাটা পড়ে অফসাইডের ফাঁদে।

যে কারণে ১ গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যেতে হয় দুইবারের বিশ্বকাপ জয়ীদের।

দ্বিতীয়ার্ধে রক্ষণাত্মক শুরুর পর তিন মিনিটের মাথায় আর্জেন্টিনার জালে আছড়ে পড়ে সৌদির বল। ৪৮তম মিনিটে ডি বক্সের কাছ থেকে বল আয়ত্তে নিয়ে আর্জেন্টাইন এক ডিফেন্ডার ও এমিলিয়ানো মার্তিনেসকে অসহায় বানিয়ে দলকে সমতায় ফেরান সালেহ আলসেহরি।

গোল শোধ করে যেন রূপ বদলে ফেলে সৌদি। ৪ মিনিটের মাথায় ডি বক্সের ভেতর একক নৈপুণ্যে দুর্দান্ত এক শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন সালেম আল দাওসারি। আর তাতেই ৪ মিনিটের মাথায় লন্ডভন্ড হয়ে যায় আর্জেন্টাইন ডিফেন্স লাইনআপ।
টানা দুই গোল হজম করে ৫৯ মিনিটের মাথায় মাঠে তিন পরিবর্তন আনেন লিওনেল স্কালোনি। পাপু গোমেস, লিসান্দ্রো মার্তিনেস ও লিয়ান্দ্রো পারেদেসকে তুলে নিয়ে এনজো ফার্নান্দেস, হুলিয়ান আলভারেস ও লিসান্দ্রো মার্তিনেসকে নামান আর্জেন্টাইন কোচ।

দলে পরিবর্তন আনার পর বেশ আগ্রাসী হয়ে ওঠে আর্জেন্টিনা। সৌদির জালে একের পর এক আক্রমণ চালাতে থাকেন তারা। কিন্তু প্রতিবারই আর্জেন্টিনার গোছানো আক্রমণে বাধ সাধেন সৌদি গোলকিপার মোহাম্মদ আলওয়াসি। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে পাল্লা দিয়ে আক্রমণ রুখে দিতে থাকেন সৌদি ডিফেন্ডাররা।

সেই সঙ্গে ছিল সৌদির দুর্দান্ত ডিফেন্স। যে কারণে সৌদির রক্ষণে চিড় ধরানো সম্ভব হচ্ছিল না মেসি-দিবালাদের।

৮০তম মিনিটে ডি বক্সের ঠিক বাইরে থেকেই ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসির করা সেই শটটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় সুযোগ হাতছাড়া হয় স্কালোনি শিষ্যদের।

৮৪ মিনিটের মাথায় ডান দিক থেকে বক্সের ভেতর ক্রস দেন দি মারিয়া। ডি বক্সের ভেতরে থাকা মেসি দুর্দান্ত হেড দিলেও সেটি রুখে দিয়ে বিপদ এড়ান আলওয়াসি।

তিন মিনিট পর ডান দিক দিয়ে লম্বা টান দিয়ে ডি বক্সের দিকে চলে আসেন দি মারিয়া। কিন্তু ব্যর্থ হয় তার সেই প্রচেষ্টাও। উল্টো ফিরতি বল নিয়ে আক্রমণে যায় সৌদি।

যোগ করা অতিরিক্ত সময়ের প্রথম মিনিটেই ডি বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নেন দি মারিয়া। ডি বক্সের ভেতর থাকা নিকোলাস ওটামেন্ডিকে পাত্তা না দিয়ে সেই বল রুখে দেন আলওয়াসি। ফিরতি বলে আলভারেসর নেয়া শট ঠেকিয়ে দিয়ে নিশ্চিত গোল রুখে দেন সৌদি ডিফেন্ডার আবদুল্লাহেল এলামরাই।

মেসিদের হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দিল সৌদি আরব
বল হেড দিয়ে ক্লিয়ার করার সময় তার পা গোললাইন অতিক্রম করলেও গোল দেননি রেফারি।

এরপর বেশ কয়েকটি আক্রমণ চালালেও ম্যাচে ফেরা সম্ভব হয়নি আর্জেন্টিনার। ২-১ গোলের হারকে সঙ্গী করে মাঠ ছাড়তে হয় মেসি-দি মারিয়াদের।

নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে শনিবার রাত ১টায় মেক্সিকোর মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। একই দিন সন্ধ্যায় পোল্যান্ডের বিপক্ষে নামবে সৌদি আরব।

পোস্টটি শেয়ার করুন