রাজশাহী প্রতিনিধি :রাজশাহীকে ইন্ডিয়া বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ সেলিব্রেশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, আমরা ইন্ডিয়ার দালাল না, অকৃত্রিম বন্ধু। কারণ তারা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বার্থহীনভাবে সহযোগিতা করেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের এই কৃত্রিম বন্ধুত্ব সারা জীবন অটুট থাকবে।
সরকার পরিবর্তনের হলেই অনেকে ভাবেন ভারতের সঙ্গে এই বন্ধুত্ব থাকবে না। এটা ঠিক না। কারণ সরকার পরিবর্তন হলেই মনের পরিবর্তন হয় না, নীতির পরিবর্তন হয় না। এই বন্ধুত্ব কখনো নষ্ট হবে না। বাঙালি অকৃতজ্ঞ জাতি না।
বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে রাজশাহীর স্থানীয় এক হোটেলে ‘ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ সেলিব্রেশন’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাইকমিশনের আয়োজিত অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে তখন যারা বিরোধিতা করেছিলো, তাদের প্রেতাত্তা স্বাধীনতা বিরোধীরা এখনো চক্রান্ত করে যাচ্ছে। তাদের ষড়যন্ত্র চলছে। হয়তো বা চলতেই থাকবে। আমাদের সজাগ থেকে এদেরকে মোকাবিলা করতে হবে।
আমাদের এখনো মনে আছে, ভারত সরকারের নির্দেশে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার কিভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। যেটা অকল্পনীয় ও অতুলনীয় ছিলো। অথচ ১৯৭৫ সালের পরে ভারতের কথাটা মুখে তুললেই একরকম দোষী সাব্যস্ত করা হতো।
মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকারের অবদান তুলে ধরে মন্ত্রী আরও বলেন, ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয়ের পরপরই বঙ্গবন্ধু ভারতের সেনাসদস্যের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে বলেছিলেন। অথচ যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে যে দেশ স্বাধীন হয়, এতো সহজে তারা সেনা তুলে নিয়ে আসে না। কিন্তু ভারত সরকার বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সেনা প্রত্যাহার করেছিলো। আমি তো মনে করি, এই সৈন্য প্রত্যাহারের ফলেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার সুযোগ পেয়েছিলো স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুদেশের সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে, ভবিষ্যতে সম্পর্কের ভিত্তি আরও মজবুত হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। এসময় তিনি ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা দূর করে জনগণের সাথে জনগণের যোগাযোগ বৃদ্ধি, সংস্কৃতির বিনিময় ও বাণিজ্য ভারসাম্য আনার আহবান জানান।
সহকারী হাইকমিশনার বলেন, প্রতিটি ভালো কাজে ভারত বাংলাদেশকে সাথে রাখে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশি দেশের সাথে থেকে স্বাধীনতা অর্জনে সাহায্য করেছে ভারতের জনগণ। দুইদেশের মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতির মিল রয়েছে –যা দুইদেশের সম্পর্ককে করেছে মজবুত ও শক্তিশালী।
অনুষ্ঠানে রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার মনোজ কুমার, পুলিশ কমিশনার রাজশাহী মেট্রোপলিটন মো. আবুল কালাম সিদ্দিক,বিশিষ্ট সমাজ সেবিকা শাহিনা আক্তার রেনী, বীর মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী বক্তব্য রাখেন।
রাজশাহীতে ইন্ডিয়া বাংলাদেশ-ফ্রেন্ডশিপ সেলিব্রেশন উপলক্ষে আলোচনাসভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতির অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার রাজশাহীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহীন আক্তার রেনী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাজশাহীস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার মনোজ কুমার।
অনুষ্ঠানের স্কুল শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধার গল্প শোনান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নওশের আলী।
পরে খাদ্যমন্ত্রী বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের পরিবেশিত এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।