

এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনঃ ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ভোর ৪টা। নিকষ কালো অন্ধকারে পিচঢালা পথবেয়ে ছুটে চলেছে একটা জলপাই রঙেরজিপ। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্কিডকরে দাঁড়িয়ে গেলো জিপটা। লাফিয়ে নামলো ৭/৮ জন কালো পোশাক মোড়া অস্ত্রধারী। কারারক্ষীদের গেট খোলার নির্দেশদিল তারা। কারারক্ষীরা অনড়,ওপরের নির্দেশ ছাড়া তারা গেট খুলতে নারাজ। অগত্যা বঙ্গভবনে ফোন করলো তারা। ফোনের অপর প্রান্তথেকে নির্দেশ পেয়ে গেট খুলে দিয়ে অস্ত্রধারীদের ভেতরে প্রবেশ করার সুযোগ করে দিতে বাধ্য হলো কারারক্ষীরা। ভেতরে ঢুকে তাদের আবদার অনুযায়ী জাতীয় চারনেতা তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও আমার বাবা এ.এইচ.এম.কামারুজ্জামানকে ১নং সেলে একসাথে জড়ো করার আদেশ দেয়া হলো।
অস্ত্রের মুখে বাধ্যহয়ে তারা সে নির্দেশ তামিল করলেন। খুনী মোসলেম বাহিনী সেই ১নং সেলে ব্রাশফায়ারে নিভিয়ে দিলো জাতির সূর্য সন্তানদের জীবন প্রদীপ। সেকেন্ডের ব্যবধানে হারিয়ে গেল বাংলাদেশের স্থপতিদের অন্যতম চারনেতার প্রাণ স্পন্দন। রেখে গেলো এক রাশ স্মৃতি। বাংলাদেশের জন্ম ও তার ইতিহাসের সাথে যাদের নিবিড় সম্পর্ক সেই মানুষগুলো হারিয়ে গেলেও হারায়নি তাদের অমর কৃতিত্ব ও অসীম অবদান। হারিয়ে যায়নি তাদের উত্তরসূরীরাও।
এখনও বইছে স্বাধীন বাংলাদেশে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা। তাঁদের স্মৃতিকে অম্লান রেখে বাংলার রাজনীতিতে মোহাম্মদ নাসিম (শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর ছেলে), সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম (শহীদ নজরুল ইসলামের ছেলে), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ (শহীদ তাজউদ্দিন আহমদের ছেলে) এবং আমি আল্লাহর অশেষ রহমতে রাজশাহীবাসীর বদান্যতায় সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে পিতার রেখে যাওয়া কাজগুলো সমাধা করার প্রয়াসে আত্ননিয়োগ করার সুযোগ পেয়েছি। বাবার অনেক স্বপ্নছিলো রাজশাহীকে নিয়ে। তিনি যখনই সুযোগ পেয়েছেন রাজশাহীর কথা জাতীয় পর্যায়ে পেশ করে এর উন্নয়নে প্রয়াস চালিয়েছেন। রাজশাহীতে খেলাধুলার পরিবেশ তৈরীর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন তিনি।
তিনি জানতেন, খেলাধুলার মাধ্যমে গড়ে উঠবে সুস্থ ও সুন্দর যুব-সমাজ। তিনি বেশ কিছুদিন রাজশাহী জেলা ক্রীড়া সমিতির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান ১৯২৩সালের ২৬ জুন বর্তমান নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলার মালঞ্চি রেল স্টেশন সংলগ্ন নূরপুর গ্রামে আমার নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা অর্থাৎ আমার দাদার নাম আব্দুল হামিদ এবং দাদির নাম মোছাঃ জেবুন্নেছা। বাবার দাদা ছিলেন রাজশাহী অঞ্চলের গুলাই এর জমিদার ও স্বনামধন্য সমাজসেবী হাজী লাল মোহাম্মদ।বাবার আট ভাই আর চারবোনের পরিবারে তিনি ছিলেন সবার বড়। দাদি শখ করে নাম রেখেছিলেন হেনা। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন তাঁর প্রিয় নাতিটি হাসনা হেনা ফুলের মতো সৌরভ ছড়াবে। হ্যাঁ,সে সৌরভের সাক্ষ্য আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। তাঁর ব্যাপ্তি আরো বহুদুর পৌঁছাতে পারত। তবে পৌঁছাতে দেয়নি বিপথগামী ঐ সেনারা। যারা রাতের আঁধারে তাঁরপ্রাণ বায়ু ছিনিয়ে নিয়েছিল।
বাবা বেশ ধর্মভীরু ছিলেন। ছোটবেলায় আমরা তাঁকে নিয়মিত নামায আদায় ও পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করতে দেখেছি। তিনি এতো দ্রুত কুরআন তিলাওয়াত করতেন যে, তাঁকে কুরআনে হাফেয বলে মনে হতো। তবে পরের দিকে বিশেষকরে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে দেশের জন্য তিনি অত্যন্ত ব্যস্তহয়ে পড়েছিলেন।ফলে তাঁকে আমরা বাসায় তেমন দেখতে পেতাম না। যতক্ষণ বাসায় থাকতেন সর্বক্ষণ নেতা-কর্মীদের দ্বারা সন্নিবেষ্টিত হয়ে থাকতেন।ফলে আমরা তেমন সঙ্গই পেতাম না। আমরা সব ভাই-বোনই বেশ মিস করতাম তাঁকে। বাবা একটা রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান ছিলেন। তাঁর দাদা হাজী লাল মোহাম্মদ ও পিতা আব্দুল হামিদ দু’জনেই ছিলেন রাজনীতির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। হাজী লাল মোহাম্মদ কংগ্রেস রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তবে ওহাবী আন্দোলনের সাথেও তাঁর সম্পৃক্ততা ছিলো বলে জানা যায়। একারণে কংগ্রেস ও প্রথম সারীর মুসলিমলীগ নেতাদের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিলো। তিনি রাজশাহী থেকে পর পর দুবার লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের (এমএলসি) সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি রাজশাহী এসোসিয়েশন ও বরেন্দ্র একাডেমীর একমাত্র মুসলিম সদস্য ছিলেন। দাদা আবদুল হামিদ মুসলিম লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন এবং দীর্ঘদিন রাজশাহী অঞ্চলের মুসলিম লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান আইন সভার সদস্য (এমএলএ) হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। মুসলিম লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে দাদার বাড়িতে শেরে বাংলা এ কে এমফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী থেকে শুরু করে বড় বড় নেতাদের সমাবেশ ঘটতো। সেই পরিবেশ থেকেই বাবার রাজনীতির হাতে খড়ি। ফলে আইন পাশ করার পর কোন পেশাতেই তিনি নিয়োজিত হতে পারেননি। সরাসরি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫১ সালে বাবা আমার মা জাহানারা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আমার নানার বাড়ি বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলার চামরুল গ্রামে। আমার নানা আশরাফ উদ্দিন তালুকদার ঐ অঞ্চলের জোতদার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আমার ছয়ভাই-বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ এবং ভাইদের মধ্যে বড়। আমার ছোট ভাইর নাম এ.এইচ.এম. এহসানুজ্জামান স্বপন (জন্ম ১৯৬১)।বর্তমানে সে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পনীতে চাকুরী করছে। আমার বোনদের নাম ফেরদৌস মমতাজ পলি (জন্ম ১৯৫৩),দিলারা জুম্মা রিয়া (জন্ম ১৯৫৫), রওশন আক্তার রুমী (জন্ম ১৯৫৭) ও কবিতা সুলতানা চুমকি (জন্ম ১৯৬৪)।
বাবা অত্যন্ত নরম স্বভাবের মানুষ ছিলেন। তাই বলে আমরা তাঁকে ভয় পেতাম না, এমন নয়। তাঁর চোখের দিকে তাঁকানোর সাহস আমাদের ছিলনা। কোন অপরাধ করলে শুধু নাম ধরে ডাকলেই আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যেতো। বাবার বড় এবং ছোটমেয়ে খুব প্রিয় ছিলো। বড় আপা পলিকে বাবা বেশ ভালবাসতেন। তবে আমরা বাবার সঙ্গখুব বেশী পাইনি। কেননা, রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় সব সময় নেতাকর্মীরা তাঁকে ঘিরে থাকতো। তখন আমাদের বেশ রাগ হতো। মার সংস্পর্শেই আমরা বড় হয়েছি। আমার মায়ের বেশ ধৈর্য ছিলো। তিনি বাবার রাজনৈতিক সঙ্গীদের যথেষ্ট সম্মান করতেন। মায়ের ঐ উদারতা ও সহায়তা না থাকলে বাবার পক্ষে অত বড় নেতা হওয়া হয়তো সম্ভব ছিলো না। এ কারণেই কথায় বলে প্রত্যেক সফল পুরুষের পিছনে কোননা কোন মহিলার হাত রয়েছে। এ কথাটা আমার মায়ের ক্ষেত্রে দারুণভাবে প্রযোজ্য বলে আমাদের মনে হয়। বিশেষকরে স্বাধীনতার নয় মাস ছোট ছোটছেলে-মেয়েসহ তিনি যে কষ্ট স্বীকার করে দিন কাটিয়েছেন সেটা সম্ভব না হলে বাবার পক্ষে স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব হতো কিনা বলা মুশকিল।
বাবা ১৯৫৬সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৬২ সালে তিনি প্রথম নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তাঁর প্রথম নির্বাচনে অংশ গ্রহণও তাঁর পিতা আবদুল হামিদের সাথে রাজনীতি নিয়ে এক চমকপ্রদ ঘটনার কথা আমরা শুনেছি। ঐ ঘটনাটা তখনকার দিনের রাজনৈতিক সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আজও অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। আগেই বলেছি, আমার দাদা আবদুল হামিদ রাজশাহী অঞ্চল থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন। ১৯৬২ সালের নির্বাচনে তাঁর ছেলে কামারুজ্জামান নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইলে আবদুল হামিদ নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ালেন। বাবা জানতেন পিতা প্রতিদ্বন্দ্বি হলে তাঁর পক্ষে নির্বাচনে জয়লাভ কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। তাই তিনি মায়ের কাছে আবদার করলেন, বাপজানকে বুঝিয়ে যেনো তিনি নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করেন। অগত্যা আবদুল হামিদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন। নির্বাচনী এলাকা সফরে গিয়ে ভিন্নচিত্র প্রত্যক্ষ করলেন আমার বাবা।এলাকার মুরুব্বিদের বক্তব্য হলো,দীর্ঘদিন মুসলিম লীগের প্রতি সমর্থন করে অভ্যস্ত বিধায় তারা হেরিকেন (মুসলিম লীগের নির্বাচনী প্রতীক) ছাড়া অন্য কোন মার্কায় ভোট দিতে পারবেন না। আবদুল হামিদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বাবাকে দায়ী মনে করে তাঁরা তাঁকে সমর্থন দেয়া থেকে বেঁকে বসলেন।অবস্থা বেগতিক দেখে বাবা বহুচেষ্টা তদবীর করে অন্তত একটা জায়গায় রফা করতে সমর্থ হলেন যে, আবদুল হামিদ সাহেব যদি এলাকায় এসে তাঁর পক্ষে ভোট চান তাহলে তারা বাবাকে ভোট দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন; অন্যথায় নয়।
অগত্যা বাবা তাঁর বাপজানের কাছে কথাটা বলতে সাহসনা পেয়ে মায়ের কাছে বায়না ধরলেন,পিতা যেনো তাঁর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ গ্রহণ করেন। কিন্তু আবদুল হামিদের কাছে কথাটা বলতেই তিনি প্রচন্ড রেগে গেলেন। একটা দলের সভাপতি হয়ে তিনি অন্য দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না, সে যেই হোক; এটা তাঁর সাফ কথা। বাবা হতাশ হয়ে এক রকম প্রচারণা বন্ধ করে দিয়ে বাড়িতে বসে রইলেন। পিতার সহযোগিতা ছাড়া নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়। এটা তিনি বিলক্ষণ বুঝতে পারছিলেন। সুতরাং মাঠে গিয়ে লাভ কি? তাই তিনি জানিয়ে দেন পিতা তাঁর পক্ষে কাজ না করলে তিনি আর নির্বাচন করবেন না এভাবেই কিছুদিনচ লে গেলো। সত্যি সত্যিই ছেলে নির্বাচনী কাজে অংশগ্রহণকরা থেকে বিরত থাকায় পিতা আবদুল হামিদ নিজেই চিন্তায় পড়ে গেলেন। ছেলের জীবনের প্রথম নির্বাচনে ভরাডুবির আশংকায় তিনি নিজেও বিচলিত হয়ে পড়লেন। অগত্যা রাজশাহী জেলার মুসলিমলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক নাটোরের মধু চৌধুরীকে ডেকে তিনি তার হাতে দলের সভাপতি ও সাধারণ সদস্যপদ থেকে পদত্যাগের আবেদনপত্র দু’টি ধরিয়ে ঘটনা খুলে বললেন। পরে পুত্রের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে তাঁকে বিজয়ী করতে সক্ষম হলেন। বাবার সেই বিজয় প্রথম হলেও আর কখনও তিনি কোন নির্বাচনে পরাজিতহ ন নাই। তবে দাদা আবদুল হামিদের এ রাজনৈতিক নৈতিকতার ঘটনা সর্বসময়ের জন্যই বিরল দৃষ্টান্ত তাতে সন্দেহ নাই। বিশেষ করে আজকের রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য এ ঘটনা শিক্ষারবার্তা বয়ে আনতে পারে। সেই অসাধারণ ব্যক্তিত্ব আমার দাদা আবদুল হামিদের সুযোগ্য সন্তান কামারুজ্জামান ও তাঁর নাতি দীর্ঘরাজনৈতিক জীবনে বিরল দৃষ্টান্তস্থাপন করে আজও জাতীয় নেতার আসনে সমাসীন রয়েছেন।
আমার বাবা তার আদর্শ ভিত্তিক নীতিনিষ্ঠ রাজনীতির কারণে ৬২থেকে ৭৫-এই ১৩ বছরের মধ্যে অনুষ্ঠিত কোন নির্বাচনেই কখনও পরাজিত হননি। এটা সম্ভব হয়েছিলো তাঁর অসাধারণ কর্মদক্ষতা, অপূর্ব সাংগঠনিক তৎপরতা আর চূড়ান্ত রাজনৈতিক সততারকারণে। এরই ফলশ্রুতিতে তিনি রাজশাহীবাসীকে আওয়ামীলীগের পতাকাতলে সামিল করেছিলেন। তাঁর এই দক্ষতা ও যোগ্যতাই তাঁকে তৎকালীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির মতো দলের সর্বোচ্চপদে সমাসীন করেছিলো।
৩ নভেম্বর সকালেই আমরা বাবার মৃত্যুসংবাদ পাই। মা অত্যন্ত ভেঙ্গে পড়েন।অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে যে মানুষটি কখনও হতোদ্যম হননি সেই মানুষটিই বাবার মৃত্যু সংবাদে কেমন মুশড়ে পড়েন। এ সময় রাজনৈতিক দলেরনেতাকর্মী আর আত্বীয়-স্বজনে ভরে যায় আমাদের বাড়ি। মা চাচ্ছিলেন বাবার লাশটা রাজশাহীতে এনে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করতে। কিন্তু খুনীদের দোষররা তাতে বাধ সাধে। অগত্যা মায়ের জেদের কাছে তাদের পরাজিত হতে হয়। রাজশাহীতে আনা হয় বাবার লাশ। তখন এক হৃদয় বিদারক কান্ড ঘটে যায়।আমাদেরও বাবার লাশ দেখতে দেয়া হয়নি। মার কাছে শুনেছি বাবার রক্তমাখা লাশটার বুকের ওপর চাদরচাপা দেয়া ছিলো। মুখটা দেখে মনে হয়নি কি নিদারুণকষ্টে তাঁর জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয়া হয়েছে। কি অপরাধ ছিলো বাবার, যার জন্য তাঁকে হত্যা করা হলো?
এর জবাব কে দেবে?
মাত্র ৫২ বছরের জীবনে যিনি অর্ধেকটাই কাটিয়েছেন আন্দোলন আর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে। স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে অন্যান্য জাতীয় নেতাসহ বাংলাদেশকে স্বাধীনতা করার কাজে যিনি জীবন উৎসর্গ করেছেন;নিজের স্ত্রী-সন্তানের দিকে তাকাবার ফুরসৎ পাননি; সেই মানুষটাকে কোন অপরাধে হত্যা করা হলো ! তা আমাদের অবোধগম্যই রয়ে গেলো। জীবনের অনেক না জানা কথার মতো এখনও আমাদের কাছে অজানা রয়ে গেলো আমার বাবার অপরাধ কি?
শুধু তাই-ই নয়, তাঁর মৃত্যুর পর দীর্ঘ ৩৯ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। অথচ আজও শাস্তি হলো না আত্মস্বীকৃত সেই খুনী আর তাদের নির্দেশদাতাদের। জানিনা আমার মা সেই বহুল প্রত্যাশিত বিচার দেখে যেতে পারবেন কিনা ?
লেখাঃ
এ.এইচ.এম. খায়রুজ্জামান লিটন
শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান হেনা’র বড় ছেলে ও মাননীয় মেয়র, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন।