

ট্রিবিউন ডেস্ক: সমীকরণের হিসেবেই ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য কঠিন ছিল। হেরে গেলেই এশিয়া কাপ থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে বাড়ি ফিরতে হতো।
মেহেদি হাসান মিরাজ আর নাজমুল হোসেন শান্তর হৃদয়জুড়ানো দুই সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ এশিয়া কাপে নিজেদের সর্বোচ্চ ৩৩৪ রান করার পরও তবু অস্বস্তি ছিল, লাহোরের পিচটা যে পাটা। এখানে বোলারদের জন্য তেমন কিছু নেই, আর আফগানিস্তানের ব্যাটিং অর্ডারে ঝড় তোলার মতো ব্যাটসম্যান কম নেই।
আফগান ইনিংসের পরতে পরতে শঙ্কা ছিল। কখনো ইব্রাহিম জাদরান, কখনো হাশমতউল্লাহ শহীদি দাঁড়িয়ে যান, আর বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের শঙ্কা বাড়ে – এই পিচে না এত রানও তাড়া করে ফেলে আফগানিস্তান!
এরপর আবার শঙ্কা ছড়াল রান রেটের হিসাব। বাংলাদেশের তো শুধু জিতলেই হতো না, আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে বড় ব্যবধানে হেরে যাওয়ায় আজ বড় ব্যবধানেই জিততে হতো।
এত প্যাঁচ, এত সমীকরণ…! অবশেষে লাহোরে আজ কঠিন সমীকরণে বারেবারে শঙ্কা জাগানো এই ম্যাচ বাংলাদেশ জিতে গেল ৮৯ রানে। উঠে গেল সুপার ফোরে। আগামী মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান ম্যাচে যারাই জিতুক, বাংলাদেশের তাতে কিছু এসে যাবে না।
দ্বিতীয় ওভারেই শরীফুলের ইনসুইঙ্গারে রহমানউল্লাহ গুরবাজ (১) এলবিডব্লিউ হয়ে যাওয়ায় মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশ বুঝি তেড়েফুঁড়েই নেমেছে বোলিংয়ে। কিন্তু এরপর আফগানিস্তানের উইকেটই পড়ছিল না, রানের গতিও ভালোই ছিল। পরে ত্রাতা হয়ে আসেন তাসকিন। ১৮তম ওভারে রহমত শাহকে ফিরিয়ে ভাঙেন রহমত শাহ ও ইব্রাহিম জাদরানের ৭৮ রানের জুটি। তবে আফগানিস্তানের হয়ে বিপদজনক হয়ে উঠছিলেন ইব্রাহিম জাদরান। ক্রিজে তো তাঁবু গেঁড়েই ছিলেন, ৫২ বলে ফিফটি পেয়ে যাওয়ার পর আক্রমণও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাঁকে ফেরাতে বিশেষ কিছুরই দরকার ছিল, ২৮তম ওভারে তা এসেছে মুশফিকের সৌজন্যে। হাসানের পঞ্চম স্টাম্পের বলটা ইব্রাহিমের ব্যাটের কানায় লাগে, ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে একহাতে ক্যাচটা ধরে ফেললেন মুশফিক। তাঁর বয়স ৩৬ চলছে – তথ্যটা যেন ক্যাচটা ঘিরে মুগ্ধতা আরও বাড়ায়। ৭৪ বলে ১০ চার ১ ছক্কায় ৭৫ রান করে ফিরলেন ইব্রাহিম।
ইব্রাহিমের বিদায়ের পরও আফগানিস্তান চতুর্থ উইকেটে আবার জুটি দেখেছে অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদির সঙ্গে আরেক জাদরান – নজিবুল্লাহ জাদরানের সৌজন্যে। গতিও বাড়ছিল সে সময়ে। ৫১ বলে ৬২ রানের সে জুটি অবশেষে ভেঙেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ৩৭তম ওভারের প্রথম বলেই অসাধারণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দিলেন নজিবুল্লাহকে (২৫ বলে ১৭)।
আফগানিস্তান একের পর এক জুটি গড়ে, একের পর এক আফগান ব্যাটসম্যান সেট হয়ে বাংলাদেশের অস্বস্তি আরও বাড়াচ্ছিলেন। নজিবুল্লাহ ফিরলেও যেমন, বাংলাদেশের অস্বস্তি হয়ে ছিলেন ৫৪ বলে ফিফটি পেয়ে যাওয়া শহীদি। তবে সে অস্বস্তিও বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। নজিবুল্লাহ ফেরার ৭ বল পরই শরীফুলের বলে থার্ডম্যানে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন শহীদি (৬০ বলে ৫১)।
৩৯তম ওভারে ২০০-র ঘরে পৌঁছে যাওয়া আফগানিস্তানের হয়ে ৪০তম ওভারে শরীফুলকে প্রথম বলে ছক্কার পর তৃতীয় বলে চার মারেন গুলবদীন নাইব। কিন্তু ওভারের শেষ বলে শরীফুল বোল্ড করে দেন গুলবদীনকে। এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে ৪০ ওভারে আফগানিস্তানের রান ৬ উইকেটে ২১২।
এরপর আর কেউ সেভাবে থিতু হতে পারেননি। নবী, জানাত, মুজিব – সবাই আউট হয়েছেন নিয়মিত বিরতিতে। একপ্রান্তে রশিদ খান যা একটু চেষ্টা করে গিয়েছিলেন, তাও তাঁর ১৫ বলে ২৪ রানের ইনিংসটা পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে। ৮৯ রানের বড় জয়ের সঙ্গে নেট রানরেটেও বাংলাদেশ দিয়েছে বড় এক লাফ।
সব মিলিয়ে স্বস্তির সুবাতাস এখন সাকিবদের ড্রেসিংরুমে।
স্কোর কার্ড : (টস-বাংলাদেশ)
বাংলাদেশ ইনিংস :
নাইম বোল্ড মুজিব ২৮
মিরাজ আহত অবসর ১১২
হৃদয় ক ইব্রাহিম ব নাইব ০
নাজমুল রান আউট ১০৪
মুশফিক রান আউট ২৫
সাকিব অপরাজিত ৩২
শামীম রান আউট ১১
আফিফ অপরাজিত ৪
অতিরিক্ত (লে বা-৬, ও-১২) ১৮
মোট (৫ উইকেট, ৫০ ওভার) ৩৩৪
উইকেট পতন : ১/৬০ (নাইম), ২/৬৩ (হৃদয়), ২/২৫৭ (মিরাজ, আহত অবসর), ৩/২৭৮ (শান্ত), ৪/২৯৪ (মুশফিক), ৫/৩২৪ (শামীম)।
আফগানিস্তান বোলিং :
ফারুকি : ৬-১-৫৩-০ (ও-১),
মুজিব : ১০-০-৬২-১ (ও-২),
গুলবাদিন : ৮-০-৫৮-১,
জানাত : ৬-০-৩৯-০ (ও-১),
নবি : ১০-০-৫০-০,
রশিদ : ১০-১-৬৬-০।
আফগানিস্তান ইনিংস :
গুরবাজ এলবিডব্লু ব শরিফুল ১
জাদরান ক মুশফিক ব হাসান ৭৫
রহমত বোল্ড তাসকিন ৩৩
শাহিদি ক হাসান ব শরিফুল ৫১
নাজিবুল্লাহ বোল্ড মিরাজ ১৭
নবি ক আফিফ ব তাসকিন ৩
গুলবাদিন বোল্ড শরিফুল ১৫
করিম রান আউট ১
রশিদ ক সাকিব ব তাসকিন ২৪
মুজিব হিট উইকেট ব তাসকিন ৪
ফারুকি অপরাজিত ১
অতিরিক্ত (লে বা-৩, ও-১৭) ২০
মোট (অলআউট, ৪৪.৩ ওভার) ২৪৫
উইকেট পতন : ১/১ (গুরবাজ), ২/৭৯ (রহমত), ৩/১৩১ (ইব্রাহিম), ৪/১৯৩ (নাজিবুল্লাহ), ৫/১৯৬ (শাহিদি), ৬/২১২ (গুলবাদিন), ৭/২১৪ (নবি), ৮/২১২ (করিম), ৯/২৪৪ (মুজিব), ১-১০/২৪৫ (রশিদ)।
বাংলাদেশ বোলিং :
তাসকিন : ৮.৩-০-৪৪-৪ (ও-৩),
শরিফুল : ৯-১-৩৬-৩ (ও-৫),
হাসান : ৯-১-৬১-১ (ও-১),
সাকিব : ৮-০-৪৪-০ (ও-১),
আফিফ : ১-০-৬-০,
মিরাজ : ৮-০-৪১-১ (ও-২),
শামীম : ১-০-১০-০।
ফল : বাংলাদেশ ৮৯ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: মেহেদি হাসান মিরাজ(বাংলাদেশ)