

কাইসার রহমানীঃ থিয়েটার শব্দটার মধ্যে গাম্ভীর্যতা আছে। অনেকটা নতুন পোশাকের মতো। যার নেই, সে মনে করে এই পোশাক পড়ার সাধ্য নাই তার। থিয়েটার যে পারেনা, তারা মনে করে এটা আমাদের কাজ না। দেখলেও কিছু বুঝবেনা।যার কারণে থিয়েটার নিয়ে,অনেক আগে থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ধারণা কাজ করে, এটা জ্ঞাণী-গুণীদের কাজ। সাধারণরা বুঝবেনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ড. ইস্রাফিল শাহীন, থিয়েটারকে এমন জ্ঞাণী-গুণীদের কাতার থেকে নামিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে আনতে চাচ্ছেন। তিনি মনে করেন, থিয়েটার সাধারণ। জাত পাতের শ্রেণী যেমন ভয়ংকর, থিয়েটারকে সাধারণ মানুষ থেকে জ্ঞাণী-গুণীদের কাতারে নিয়ে যাওয়াটাও থিয়েটারের জন্য মঙ্গলজনক নয়। তাইতো ইস্রাফিল শাহীন, চারদেয়ালে বাইরে, নানান ফর্মে থিয়েটারকে এনেছেন সাধারণ মানুষের কাছে। তার এই চেষ্টা এখনো অব্যাহত।
ড. ইস্রাফিল শাহীন শুরু করতে যাচ্ছেন প্রিজন থিয়েটার। দেশের কারাগারগুলোর কারাবন্দিদের অংশগ্রহণে মঞ্চস্থ হবে নাটক। নাটক বেছে নেয়া হয়েছে প্রখ্যাত মুনীর চৌধুরীর কবর নাটকটি। কারবাবন্দিদের আত্মসংশোধনের জন্য নাটকের ব্যবহার শুরু হচ্ছে প্রথমবারের মতো। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে এ আয়োজন কেরানীগঞ্জে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শুরু হবে। প্রাথমিক কাজ শুরু হয়ে গেছে।
শুক্রবার ( ১৩ নভেম্বর ) কেরাণীগঞ্জ কারাগার ঘুরে দেখেছেন ইস্রাফীল শাহীন। জেল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও বন্দিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। শুরুতেই তিনি বুঝতে চেষ্টা করছেন, কাজটা কিভাবে তাদের মতো করে শুরু করা যেতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ইসরাফিল শাহীনের তত্ত্বাবধানে দেশের সব কারাগারেই নাটক মঞ্চায়নের চেষ্টা করা হবে। তাঁর সঙ্গে কাজ করছেন মোহাম্মদ আহসান খান, রাগীব নাঈম ও মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। তাঁদের এমফিল ও পিএইচডি গবেষণার সঙ্গে যুক্ত এই কারানাট্য। এ ছাড়া নির্বাচিত নাট্যকর্মী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদেরও এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ থাকবে।
ড. ইসরাফিল শাহীন জানিয়েছেন, তিন বছরব্যাপী এই গবেষণাধর্মী কাজের জন্য ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা অধিদপ্তর অনুমতি দিয়েছে। আয়োজনটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং কারাগারের রোজনামচা থেকে বিভিন্ন দৃশ্য কারাবন্দীদের মধ্যে পরিবেশন করা হবে। এ ছাড়া জাতীয় চার নেতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ডটিও কারাগারের ভেতরে কারাবন্দীদের দিয়ে অভিনীত ও পরিবেশিত হবে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রকল্পটির উদ্বোধনী আয়োজন করার কথা চলছে।
ইসরাফিল শাহীন বলেন, কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে কাজ করলে, বন্দিদের মানসিক পরিবর্তন হবে। সাংস্কৃতি আবহে তাদের মনে পরিবর্তন আসবে। তারা উৎসাহিত হবেন। তাদের জীবনযে শেষ হযে যায়নি এমন বোধ তাদের মধ্যে তৈরি করতে হবে। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার শক্তি দিতে হবে। আর সব পরিবর্তনই নাটকের মাধ্যমে সম্ভব।
ড. ইস্রাফিল শাহীন পথনাট্য নিয়ে দীর্ঘদিন পড়ালেখা, গবেষণা ও কাজ করেছেন। কারানাট্য নিয়ে চিন্তাভাবনা প্রায় ১৫ বছরের। কারাগারের পর এ মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতাল এবং শিশু-কিশোর সংশোধনাগারেও তাঁরা থিয়েটার নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে।
কাইসার রহমানী
সাংবাদিক ও লেখক।