ট্রিবিউন ডেস্ক: মেসি-ম্যারাডোনাদের দেশ আর্জেন্টিনার সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে চলতি বছর। তবে দুদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হলেও ৪৪ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে দূতাবাস। তবে এবার ঢাকায় দূতাবাস খোলার দিকে যাচ্ছে লাতিন আমেরিকার দেশটি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সমর্থন জুগিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার বিখ্যাত কবি ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। আর আর্জেন্টিনার জাতীয় ফুটবল দলের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত বিষয়।
সম্প্রতি আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্র মন্ত্রী সান্তিয়াগো ক্যাফিয়েরো ঘোষণা করেছেন, তার দেশ ৪০ বছর পর বাংলাদেশে পুনরায় দূতাবাস খুলবে। আর এর পেছনে ফুটবল বিশ্বকাপে লিওনেল মেসির দলের প্রতি বাংলাদেশিদের ব্যাপক সমর্থন কাজ করেছে।
স্বাধীনতার পর ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়াতে আর্জেন্টিনার বাসিন্দার জন্য একজন রাষ্ট্রদূত এবং আর্জেন্টিনা ভারতের নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশের বাসিন্দাদের একজন রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করে। সত্তুরের দশকে চালু হওয়া আর্জেন্টিনায় বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন বন্ধ হয়ে যায় ১৯৭৮ সালে। সবশেষ ২০০৮ সালে আর্নেস্তো কার্লোস আলভারেজকে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
এর আগে ২০১১ সালে বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস বুয়েনস আইরেসে একটি সরকারি সফর করেন। চলতি বছরের সালের জুলাই মাসে দেশ দুইটির কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর স্মরণে, আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্র নীতির আন্ডার সেক্রেটারি ক্লাউদিও জাভিয়ের রোজেনকওয়েগ বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত হুগো গোবিকে নিয়ে ঢাকা সফর করেন।
আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাফিয়েরো জানান, ২০২৩ সালে ভারতে জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পর তিনি বিস্তারিত চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশে সফর করবেন।
চলতি বছরের আগস্টে ক্যাফিরো তার বাংলাদেশি প্রতিপক্ষ আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার উন্নয়নের জন্য দেখা করেছেন। বৈঠকে উভয় কূটনীতিকই দুই দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির ব্যাপক সম্ভাবনার বিষয়ে সম্মত হন।
আর্জেন্টিনার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কটাও তুলনামূলক বেশ ভাল অবস্থানে আছে বলা যায়। গতবছর বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির জন্য একটি ঐতিহাসিক সর্বোচ্চ ৮৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাণিজ্য উদ্বৃত্ত। বাণিজ্যিক পণের মধ্যে শীর্ষে ছিল সয়াবিন উপজাত, ভুট্টা, এবং গম।
অপরদিকে বাংলাদেশি জাহাজ, ওষুধ, তৈরি পোশাক, মেলামাইন এবং সিরামিক আর্জেন্টিনার বাজারে বিপুল সম্ভাবনার পণ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আর্জেন্টিনায় বাংলাদেশি সিরামিকের ভালো চাহিদা রয়েছে এবং এফএআরআর সিরামিকস আর্জেন্টিনায় একটি প্রধান বাংলাদেশি সিরামিক রপ্তানিকারক।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘দূতাবাস এবং এর কনস্যুলার বিভাগ পুনরায় খোলার পাশাপাশি আমরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চাই, প্রধানত বাণিজ্যিক দিকটিতে যার বৃদ্ধির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। একইভাবে, খেলাধুলা, স্যাটেলাইট, মানবিক সহায়তা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রচারের জন্য আমরা দূতাবাস চালু করতে চাই।’
লাতিন আমেরিকার বার্তা সংস্থা মেরকো প্রেস জানিয়েছে, পৃথিবীর দুই প্রান্তের দেশ দুটির সাধারণ জনগণের মধ্যে ভালোবাসার এই বন্ধন সম্ভবত যুক্তরাজ্যের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে তৈরি হয়েছে।
১৯৪২ সালে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল বাংলাদেশে যা তৎকালীন পাকিস্তানের অংশ, সমস্ত সরবরাহ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারণ তিনি মনে করতেন, তৎকালীন বাংলা জাপানকে সহযোগিতা করেছিল। যার ফলে ১৯৪৩ সালে বাংলায় ভয়ানক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এবং এর ফলে প্রায় ৩০ লাখ লোকের মৃত্যু হয়।
এরপর ১৯৮৬ সালে ফুটবল বিশ্বকাপে ব্রিটেনের বিরুদ্ধে দিয়াগো ম্যারাডোনার হ্যান্ড অব গড এবং গোল অফ দ্য সেঞ্চুরি বাংলাদেশিদের মনে দাগ কেটে যায়। ধারণা করা হয় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এমন বিজয়ের পর থেকে বাংলার মানুষ আর্জেন্টিনার নিঃশর্ত ভক্ত হয়ে উঠে। সেই থেকে তারা প্রতি বিশ্বকাপের বুয়েনস আইরেসের তুলনায় বেশি উন্মাদনা দেখায় এবং উদযাপন করে।