দুবছর আগেও ছিলেন রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের নেতা, বর্তমানে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি!

Chapai Chapai

Tribune

প্রকাশিত: ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২

ট্রিবিউন ডেস্ক: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রবাসের আহবায়ক কমিটির ৬নং যুগ্ম আহবায়ক সাকিবুল ইসলাম রানা। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতির পদে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৬ সালেই ‍যিনি ছিলেন ছাত্রদলের একজন সক্রিয় নেতা, মাত্র ৬বছরের ব্যবধানে বনে গেছেন রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতা। রানা সভাপতি হলে খোদ রাজশাহী কলেজ ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রকি কুমার ঘোষ হতাশা প্রকাশ করে জাতীয় পত্রিকায় বিবৃতি দেন যে, রানা কে ছাত্রদল করার অপরাধে হোস্টেল থেকে বের করে দিয়েছিলাম।

এবার সেই কমিটির কপি প্রমান হিসেবে প্রতিবেদকের কাছে আসে। সেখানে দেখা যায়; ২০১৬ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল রাজশাহী কলেজ শাখার তৎকালীন সভাপতি মুর্ত্তজা ফামিন ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমান (সৌরভ) স্বাক্ষরিত রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসের ৮সদস্যের একটি আহবায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়।

রাজশাহী কলেজ মুসলিম হোস্টেল ছাত্রদলের কমিটিতে সাকিবুল ইসলাম রানা

জানা যায়, দীর্ঘ ৪ বছর স্থায়ী ছিলো এ কমিটি। করোনা মহামারীর পূর্বে ২০২০ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের একটি নির্দেশনা অনুযায়ী বিলুপ্ত হয় দেশের অধিকাংশ কলেজ ও হল ছাত্রদলের কমিটি। সেই সাথে বিলুপ্ত হয় এই কমিটিও।

২০২০ সালে বিলুপ্ত হয় ছাত্রদলের এই কমিটি, আর ২০২২ সালে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের সভাপতি হয়ে গেলেন সাবেক ছাত্রদলের এই নেতা। জানা যায়, রাজশাহী কলেজে অধ্যায়নের সময় ছাত্রদলের মিছিল, মির্টিংয়েও সমান তালে সক্রিয় ছিলেন এই রানা। ছাত্রদলের নাম ব্যাবহার করে দাপটের সাথে থাকতেন রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসে।

চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের ৩০সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষনা দেন। কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব পান সাকিবুল ইসলাম রানা। তখন রাজশাহীর ছাত্রলীগের সাবেক বর্তমানরা নেতাকর্মীরা অবাক। কারণ তাকে কোন নেতাকর্মী জেলা ছাত্রলীগের নেতা বা কর্মী হিসেবে দেখেনি বা নাম শুনেনি। কমিটিতে প্রার্থীতার বিষয়েও রানার নাম জানতো না কেউ। সভাপতি হওয়ার পরপরই একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সংবাদের শিরোনাম হচ্ছেন তিনি।

এসকল বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, নগরীর দরগাপাড়ায় সাইকেল চুরি, নারী কেলেঙ্কারী, মদ্যপ অবস্থায় চাঁদাবাজি করতে গেলে গণধোলাইসহ বিভিন্ন অভিযোগে ইতিমধ্যেই সংবাদের শিরোনাম হচ্ছেন রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের এই শীর্ষ নেতা।

এবিষয়ে ততকালীন রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মূর্ত্তজা ফামিন বাংলার জনপদকে বলেন, সাকিবুল ইসলাম রানা তো একজন ছাত্রদল নেতা। তবে আশ্চর্য হয়েছি তখন, যখন দেখলাম সে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছে। এই রানা একসময় আমাদের সাথে ছাত্রদলের মিছিল মিটিং করেছে। একটি দীর্ঘ সময় সে ছাত্রদলের সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছে। আর সে তো এখনও আমাদের সদস্য কারন কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে কিন্তু সে তো দল থেকে অব্যাহতি নেয় নি।

এদিকে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলাম রানার বর্তমান ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার থেকে একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি আইডি পাওয়া যায়। তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার (০১৭৭৩২৫৩৭**) এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নাম – ডিএক্স রুবেল খান। তার নাম্বার থেকে প্রাপ্ত আইডির ডিটেইলস থেকে দেখা যায়, এই আইডিটি থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল জাকিগঞ্জ উপজেলা নামের একটি পেজে লাইক দেয়া, বাংলাদেশ ছাত্রদল নামক আরেকটি পেজে ফলো দেয়া এবং আমরা মোবাশ্বের ভাইয়ের সমর্থক নামের আরো একটি বিএনপিপন্থী পেজে ফলো প্রদান করা।

এসকল বিষয়ে মুঠোফোনে আমাদের সাথে কথা হয় রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলাম রানার সাথে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হচ্ছে তা একেবারেই মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি কখনো ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে ছিলাম না। এ সকল অভিযোগের দ্বারা আমাকে রাজনৈতিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে একটি কুচক্রি মহল। আমি তাদের এসকল কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

এবিষয়ে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির গনযোগাযোগ ও ‍উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক শেখ শামীম তুর্জ বাংলার জনপদকে বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠনে যদি কেউ অনুপ্রবেশ করে ছাত্রলীগের নাম খারাপ করে, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে সেটি আমরা ক্ষতিয়ে দেখছি। যদি এর সত্যতা পাওয়া যায় তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দ্বারার সাথে কথা বলার জন্য একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

পোস্টটি শেয়ার করুন