ট্রিবিউন ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্যোগঝুঁকি হ্রাসে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় প্রতিবছর বাংলাদেশ মোট দেশজ উৎপাদনের ৬ থেকে ৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় করছে।
রোববার (১১ ডিসেম্বর) সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জলবায়ু সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে এসব কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের স্থানীয়রা তাদের প্রথা জ্ঞানে জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করে থাকেন। আমাদের সরকার উদ্বোধনী শক্তি ও সম্পদ দিয়ে তাদের পাশে আছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলায় রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়।’
২০২৩-২০৫০ সালের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (এনএপি) বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এ জন্য মোট ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থান থেকে আমাদের এনএপি বাস্তবায়নে ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন থেকে অভিযোজন এবং প্রশমনের মধ্যে ৫০-৫০ বণ্টনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘গ্লোবাল হাব অন লোকালি লেড অ্যাডাপটেশন’ খোলার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার এখন জিডিপির ৬ বা ৭ শতাংশ জলবায়ু অভিযোজনে ব্যয় করে এবং সম্প্রতি ২০২৩-২০৫০ সালের জন্য ন্যাপ চালু করেছে।
কপ ১৫-এর পর বাংলাদেশ তার নিজস্ব সম্পদ দিয়ে ২০০৯ সালে একটি জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ তহবিলটি জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমন উভয় ক্ষেত্রেই এ পর্যন্ত ৮০০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, যা দুর্যোগঝুঁকি হ্রাসে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ন্যাপ আমাদের বাংলাদেশ ডেলটা প্ল্যান ২১০০ এবং মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার আওতায় যে কাজ হচ্ছে তার পরিপূরক হবে। আমি প্যারিস চুক্তির চেতনায় এ প্রচেষ্টায় আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক ও সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে আমাদের অংশীদারদের আমন্ত্রণ জানাই। একই সঙ্গে, আমরা সমস্ত প্রধান কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোকে তাদের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদানের সুযোগ আরও বাড়ানোর জন্য আহ্বান জানাই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সবাইকে অবশ্যই বৈশ্বিক উষ্ণতা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করতে হবে।’
তিনি বলেন, আজ চালু হওয়া স্থানীয় নেতৃত্বাধীন অভিযোজন বিষয়ে গ্লোবাল হাবকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেবে বাংলাদেশ সরকার।
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আরেকটি অফার পেয়ে আনন্দিত জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ঢাকায় গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন (জিসিএ) আঞ্চলিক কার্যালয়কে এ অঞ্চল এবং এর বাইরেও শ্রেষ্ঠত্বের কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কতটা বিরূপ হতে পারে; পরিবেশ ও মানুষের জীবনের জন্য এর ঝুঁকি কতটা ভয়াবহ হয়। বছর-বছর নানান ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পাড়ি দেয়া বাংলাদেশ সেই সত্য দেখিয়ে দিয়েছে বিশ্বকে। জলবায়ুর এ ক্ষতি সামলে উঠতে বৈজ্ঞানিক পন্থা হিসেবে বলা হচ্ছে অভিযোজন বা খাপ খাইয়ে নেয়ার কর্মসূচিকে। যদিও, বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ুঝুঁকি কমিয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পেরেছে মৃত্যুর হার।
অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ হাইকমিশনার, জলবায়ু বিশেষজ্ঞসহ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।