

ট্রিবিউন ডেস্ক: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা। প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল ও জনসভার মতো জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি চলতি আগস্ট মাস থেকেই শুরু করছে জোটটি। এর অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াতের ‘সহিংসতা ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে’ জনমত গড়তে বুধবার (২ আগস্ট) মাঠে শাহবাগে সমাবেশ করবে ১৪ দল।
সূত্রমতে, সরকারবিরোধীদের আন্দোলন মোকাবিলায় দীর্ঘদিন থেকে এককভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছে আওয়ামী লীগ। এই সময়ে ১৪ দলের তেমন একটা কর্মসূচি দেখা যায়নি। এ নিয়ে জোট নেতারা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ রয়েছে তাদের। ফলে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন ১৪ দলকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
১৪ দলের অন্তত তিনটি শরিক দলের শীর্ষ নেতা বলেন, জোটকে সক্রিয় করার প্রথম ধাপ হিসেবে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও কর্মসূচি আসবে। তারমধ্যে থাকছে—প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল ও জনসভার মতো জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি। শোকের মাস আগস্টের বিবেচনায় চলতি মাসে সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন করা হবে। সেপ্টেম্বর থেকে নির্বাচনি জনসভা শুরু হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে ১৪ দল জোটগতভাবে অংশ নেবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে চলতি মাস থেকে আমরা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছি। সমাবেশ ও মিছিল দিয়ে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু করা হবে।’
সোমবার (৩১ জুলাই) আমির হোসেন আমুর নিউ ইস্কাটনের বাসায় জোট নেতাদের এক বৈঠকে বুধবার (২ আগস্ট) থেকে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে সেই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে জোটের মুখপাত্র আমু বলেন, ‘২ আগস্ট থেকে আমরা মাঠে নামবো। প্রাথমিকভাবে সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করবো।’
সূত্রমতে, বৈঠকে আলোচনায় সবশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার পাশাপাশি জোট সম্প্রসারণের বিষয়টিও উঠে আসে। ৫৮ দলীয় সম্মিলিত জাতীয় জোটসহ (ইউএনএ) বেশ কয়েকটি ইসলামি দলও ১৪ দলে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে ১৪ দল একটি ‘আদর্শিক’ জোট হওয়ায় শরিক দলগুলোর নেতাদের ঘোর আপত্তির বিষয়টিও এই বৈঠকে পুনরুত্থাপিত হয়।
জানা যায়, ইউএনএসহ অন্য দলগুলোকে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করতে বলা হয়েছে। তাতে আওয়ামী লীগ ও জোটের অপ্রকাশ্য সমর্থন থাকবে বলেও বৈঠকে জানানো হয়। এ ছাড়া ১৪ দলের শরিক দলগুলোকেও দলীয়ভাবে আলাদা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৪ দল চলতি মাস থেকে মাঠে নেমেছে। প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল ও জনসভা করবো আমরা। সেপ্টেম্বর থেকে পুরোদমে নির্বাচনি প্রচার শুরু হবে।’
সূত্র বলছে, গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর সঙ্গে ইউএনএ’র শরিক দলগুলোর একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে। পরে আওয়ামী লীগের দফতর থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং চলমান রাজনীতিতে দল ও জোটগুলোর ভূমিকা ও করণীয়’ শীর্ষক এ বৈঠক হয়। এতে দেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার ব্যাপারে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ইউএনএ’র নেতারা দেশের চলমান সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে ১৪ দলীয় মহাজোটের সঙ্গে একযোগে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এদিকে, দীর্ঘ ১৬ মাস পর গত ১৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ১৪ দলের নেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জোটের সভা হয়। সেখানে আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান নেন জোট নেতারা। নির্বাচন ‘ব্যাহত করার যেকোনও ষড়যন্ত্র’ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার কথা জানানো হয় জোটের পক্ষ থেকে। সেই সঙ্গে সেপ্টেম্বর মাস থেকে নির্বাচনি প্রচারে নামবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় ১৪ দল।