
নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাফার গুদামের ইনচার্জ মো. ফারুক হোসেনকে বদলীর আদেশ দেয়ার পরও কোন্ অজ্ঞাত কারণে ছাড়ছেন না চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ।
এভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশকে অমান্য করে বদলী স্থান সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ এসএফসিএলে যোগদান না করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অফিসে চাকুরী করলেও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের কোন মাথাব্যাথা না থাকায় এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডিলারদের হয়রানী থেকে পরিত্রান না পাওয়ায় নানা প্রশ্ন উঠেছে বাফার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও। গত ১১ মে বদলীর আদেশ হলেও এখন পর্যন্ত আদেশের কোন তোয়াক্কা না করে কিভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে দায়িত্ব পালন করছেন এমন প্রশ্ন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ইউনিট নেতৃবৃন্দ ও সদস্যদের।
তবে এ অভিযোগের বিষয়টি তাঁর বিরুদ্ধে নয়, অন্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বলে দাবী চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাফার গুদামের ইনচার্জ মো. ফারুক হোসেন এর। তাঁর বদলী সাধারণ এবং রিলিজ অর্ডার না হওয়ার চাঁপাইনবাবগঞ্জে অফিস করছেন বলে দাবী বাফার এই কর্মকর্তার। জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাফার গুদামের ইনচার্জ মো. ফারুক হোসেনকে গত ১১ই মে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ এসএফসিএলে বদলি করা হয়।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের ডেপুটি চিফ অফ পার্সোনেল মো. মাসুদ পারভেজ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বদলি আদেশ দেন। কিন্তু প্রায় আড়াই মাস পার হলেও বদলির আদেশ উপেক্ষা করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাফার গুদামের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন এখানেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন হলেও নতুন কর্মস্থলে যোগদানও করছেন না। অন্যদিকে, চট্টগ্রামের নর্থ পতেঙ্গা টিএসপিসিএল থেকে বদলি হয়ে আসা মোহাম্মদ মোবাশ্বির রায়হান চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাফা’য় নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। এনিয়ে ডিলারদের মাঝে নানা অসন্তোষ ও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এছাড়াও, কোন অজ্ঞাত কারণে এ কর্মস্থলে থাকার জন্য বদলি আদেশ ঠেকাতে তদবির করছেন এবং এখন পর্যন্ত পদে বহাল আছেন এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে দৃষ্টি না দেয়ায় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও নানা গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার তৎকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ২০২১ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর বাফার গুদাম কর্মকর্তাদের নানা অণিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ তুলে বিসিআইসি’র চেয়ারম্যান বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের চিফ অফ পার্সোনেল এর পক্ষে ডেপুটি চিফ অফ পার্সোনেল মো. মোসতাক আহমেদ বিসিআইসি’র কোম্পানি উপ-বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) মোহাম্মদ শামীম রানাকে তদন্তের ভার দেন। বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত হয়, তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১১ই নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। তদন্তে প্রমানিতও হয় অভিযোগের বিষয়বস্তু।
শেষে বাফার ইনচার্জ ফারুক হোসেনকে প্রত্যাহার এবং দক্ষ কর্মকর্তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাফার গুদামে পদায়নের সুপারিশ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামীম রানা। পরে ২০২২ সালের ১১ই মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাফার গুদামের ইনচার্জ মো. ফারুক হোসেনকে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ এসএফসিএল-এ বদলি করা হয়। বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অধিকাংশ ডিলারদের ধারনা দীর্ঘদিন ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাফার গোডাউনে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হলেও অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
অভিযোগের পরই চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাফার ২য় কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল ইসলাম বদলী হয়ে চলে গেলেও সকল অপকর্মের হোতা চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাফার গুদামের ইনচার্জ মো. ফারুক হোসেন বদলীর আদেশ হওয়ার পরও যাচ্ছেনা কেন? তাঁদের ধারণা ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে এখানে আছেন এবং নানা অনিয়ম দূর্ণতি করে যাচ্ছেন। ফলে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন ডিলাররা।
এবিষয়ে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ইউনিটের সভাপতি আলহাজ¦ মো. আকবর হোসেন বলেন, বাফার গুদাম ইনচার্জের বিরুদ্ধে বিসিআইসি’র চেয়ারম্যান বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়। অভিযোগ তদন্ত হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা বিসিআইসি’র কোম্পানি উপ-বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) মোহাম্মদ শামীম রানা বাফার গুদাম ইনচার্জ ফারুক হোসেনের বিভিন্ন অপকর্মের প্রমাণ পান।
তাকে বদলির জন্য সুপারিশ করেন। গত ১১ই মে ফারুক হোসেনকে বদলির আদেশ হয়। প্রায় আড়াই মাস পূর্বে বদলির অদেশ হলেও ফারুক হোসেন কেন নতুন কর্মস্থলে যাচ্ছেন না, সেটা নিয়েই নানা কথা উঠেছে। আমরা চাই, অভিযুক্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাফার গুদামের ইনচার্জ মো. ফারুক হোসেন দ্রুতই এখানকার পদ ছেড়ে চলে যান। তিনি যত দ্রুত এ পদ ছেড়ে যাবেন, তত দ্রুতই এখনকার নানা অপকর্ম বন্ধসহ জেলার ডিলাররা নিরাপদ ও স্বস্তিতে ব্যবসা করতে পারবেন।
এব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাফার গুদাম ইনচার্জ মো. ফারুক হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেন নি বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ইউনিট। চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাফার ২য় কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করা হয়। প্রেক্ষিতে তদন্ত হয়। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে কোন দূর্ণীতি বা অনিয়মের বিষয়ে তদন্তও হয়নি।
বদলী বিষয়ে তিনি জানান, আমার বদলীর আদেশ হয়েছে গত ১১ মে। কিন্তু এ বদলী আদেশ কোন অভিযুক্ত আদেশ নয়, সাধারণ বদলী আদেশ। তবে বদলী আদেশের পরও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের রিলিজ অর্ডার লাগে। রিলিজ অর্ডার না হাতে পাওয়ায় আমি এখানে দায়িত্ব পালন করছি। রিলিজ অর্ডার হাতে পেলে দ্রুতই নতুন কর্মস্থলে যোগদান করবো বলেও জানান চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাফার গুদামের ইনচার্জ মো. ফারুক হোসেন।
বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে চাঁপাইবাবগঞ্জ বাফার ডিলারদের নিরাপদ ও শান্তিতে ব্যবসা করার পরিবেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবেন সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এমনটায় আশা জেলার সার ডিলারদের। উল্লেখ্য, জেলায় মোট ৫৮জন সার ডিলার রয়েছেন।