ব্যাংক এমডিদের সুরক্ষা দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

Chapai Chapai

Tribune

প্রকাশিত: ৪:১৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩

ট্রিবিউন ডেস্ক: বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সুরক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর অংশ হিসাবে ব্যাংকের এমডিদের ওপর পরিচালকদের অনৈতিক চাপ প্রয়োগ বন্ধ, ব্যাংকের নির্বাহী ও পর্ষদের মধ্যকার ক্ষমতা ও কাজের পরিধি অনুযায়ী কাজ করতে হবে। ব্যাংক পরিচালনায় প্রচলিত নিয়মনীতির বাইরে গিয়ে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে পর্ষদকে। ব্যাংক পরিচালকদের উদ্দেশে এমনই বার্তা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে ব্যাংক নির্বাহীদেরও অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি কয়েকটি বেসরকারি খাতের ব্যাংকের পর্ষদের সঙ্গে এমডিদের ঋণ অনুমোদন নিয়ে মতবিরোধ প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর পর্ষদ সভায়ও এ নিয়ে এমডিদের সঙ্গে কিছু পরিচালকের মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। একে কেন্দ্র করে উচ্চবাচ্যও হয়েছে। এতে চারটি ব্যাংকের চারজন এমডি তাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার অনেক আগেই পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ করা এমডিদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে একটি ব্যাংকের এমডি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ফিরে গেছেন। আরও একজন এমডিকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি এখন অফিস করছেন। আরও দুটি ব্যাংকের এমডিকে নিজ ব্যাংকে ফিরিয়ে নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। সোমবার ও মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুজন পদত্যাগী এমডি ও একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এর আগের সপ্তাহে আরও একটি ব্যাংকের পদত্যাগী এমডির সঙ্গে কথা বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

পদত্যাগী এমডিদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিশেষ করে ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে পর্ষদের কোনো কোনো সদস্য মাত্রাতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করছেন। কিন্তু ওইসব ঋণ অনুমোদন করার মতো আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে এমডিরা এতে আপত্তি তুলেছেন। কিন্তু পর্ষদের কোনো কোনো সদস্য সেগুলো অনুমোদন করার চাপ দিয়েছেন। এতে পর্ষদ সভায় বাগবিতণ্ডা হয়েছে। এ কারণে তারা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।

একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেছেন, ব্যাংকের পর্ষদে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে তারা আরও সতর্ক হবেন।

সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া কোনো কোনো ব্যাংকের পর্ষদ ও নির্বাহীদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, কোন কোন নির্বাহীরা নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করতে পারছেন না সে বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এর ভিত্তিতে পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও কিছু পদক্ষেপ নেবে বলে জানা গেছে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৪ সালে একটি সার্কুলার জারি করে বলেছিল, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কোনো ব্যাংকের এমডি স্বেচ্ছায় পদ ছাড়তে চাইলে এক মাস আগে পদত্যাগের কারণ জানিয়ে আবেদন নিজ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে হবে। ব্যাংকের এমডি নিয়োগের চুক্তি বাতিল বা পদত্যাগপত্র গ্রহণ করতে হলে পর্ষদের অনুমোদনের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যাংকের এমডির চুক্তি বাতিল বা কাউকে পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে না।

এছাড়া ব্যাংকের এমডি ও পর্ষদের মধ্যে কাজের পরিধি সুনির্দিষ্ট করে দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। ওই বিধান ব্যাংকগুলোতে পরিপালন হচ্ছে না। সে কারণে এখন কয়েকটি ব্যাংকে এমডি পর্ষদ বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে।

সূত্র জানায়, বর্তমান আর্থিক সংকটের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাচ্ছে না, নতুন করে কোনো ব্যাংকে সংকট তৈরি হোক। এ ছাড়া ব্যাংকের এমডিরা যাতে পেশাদারত্বের সঙ্গে ব্যাংক পরিচালনা করতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে পেশাদারত্বের সঙ্গে যেসব এমডি ব্যাংক পরিচালনা করবেন তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সুরক্ষা দেওয়া হবে।

এর আগেও কয়েকটি ব্যাংকের এমডি পর্ষদের চাপের মুখে পদত্যাগ করেছিলেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন