ট্রিবিউন ডেস্ক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘ছাত্র-শিক্ষক নির্যাতন দিবস’ পালিত হয়। ২০০৭ সালের আগস্টে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক নির্যাতনের বার্ষিকী স্মরণে দিবসটি পালন করা হয়।
এই উপলক্ষে এদিন বেলা ১১টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য মো. আয়েন উদ্দিন এমপি।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর (অব.) মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক। সেখানে নির্যাতিত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে প্রফেসর মলয় ভৌমিক (ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ), প্রফেসর দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস ও প্রফেসর আব্দুল্লাহ আল-মামুন (গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা), ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন (প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান), মো. সাদেকুল ইসলাম (উপ-প্রধান তথ্য অফিসার) প্রমুখ স্মৃতিচারণ করেন।
সভার শুরুতে ১৯৭৫ সালের আগস্টে নিহত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
রাবি রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. আবদুস সালাম আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন।
আলোচনাকালে প্রফেসর মলয় কুমার ভৌমিক বলেন, ২০০৭ সালের আগস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে তা তাঁদের মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়িত্বের চেতনা থেকেই করেন। জাতির ক্লান্তিকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে।
প্রফেসর দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস তাঁর বক্তব্যে সেই নিপীড়ন ও হয়রানির নিন্দা জানান। তিনি বলেন, হয়রানিমূলক মামলার মাধ্যমে প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্তব্ধ করার যে চক্রান্ত করা হয় তা ব্যর্থ হয়ে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। দিবসটি যাতে নিয়মিত পালন করা হয় তার জন্যও কর্তৃপক্ষের প্রতি তিনি আহ্বানন জানান। এছাড়াও নির্যাতনের সঠিক তদন্তের জন্য নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশনের প্রস্তাব করেন তিনি।
প্রফেসর আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সেদিনের সেই সম্মিলিত প্রতিবাদের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল। ফলে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে।
ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ২০০৭ সালের আগস্টে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে তা ছিল স্বতঃস্ফূর্ত ও নৈতিক দায়িত্ববোধের চেতনা থেকে। সে আন্দোলন-প্রতিবাদের ফলে ক্ষমতাসীন সরকার দমননীতির পথ গ্রহণ করে। কিন্তু এক সময় অনুভব করে যে সে প্রতিবাদকে দমন সম্ভব নয়। তাই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মামলা থেকে সবাইকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
মাননীয় সংসদ সদস্য তাঁর বক্তব্যে বলেন, এদেশের ছাত্র সমাজ সবসময় অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়ে এসেছে। ২০০৭ সালের আগস্টে অগণতান্ত্রিক সরকারের দমন-পীড়নমূলক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আবারও তাদের দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছে।
সভায় উপ-উপাচার্য বলেন, ২০০৭ সাল ছিল জাতির জন্য এক ক্রান্তিকাল। সে সময় গণবিচ্ছিন্ন কিছু মানুষ অগণতান্ত্রিক পন্থায় রাষ্ট্র ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতায় থাকা দীর্ঘায়িত করার চক্রান্তের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিপীড়নের পথ বেছে নেয়। কিন্তু সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখে সেই অপশক্তি পিছু হটতে বাধ্য হয়। ভবিষ্যতেও সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদী ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আলোচকগণ ২০০৭ সালের আগস্টে সেই সময়ের সরকার কর্তৃক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন-নির্যাতনের ঘটনার বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
সভার সভাপতি ও উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে বলেন, ২০০৭ সালের আগস্টে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। তারা নৈতিক কারণেই এর বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিলসহ প্রতিবাদী সমাবেশ করে। বিশ্ববিদ্যালয়সমাজ সবসময়েই নৈতিক ও বিবেকবোধের দৃষ্টিকোণ থেকেই সব অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়েছে এবং অবশেষে তারাই জয়ী হয়েছে। আগামীতেও সকল ন্যায় সঙ্গত আন্দোলন সংগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় সমাজের এই গৌরবময় ধারা অক্ষুণ্ন থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রসঙ্গক্রমে, ২০০৭ সালের ২২ আগস্টে রাবি ক্যাম্পাসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টিয়ার গ্যাসের সেলের আঘাতে নিহত রিকসাচালক আফজাল আলীর পরিবারকে সহায়তা প্রদানের জন্য তহবিল গঠনের কথাও উপাচার্য উল্লেখ করেন। সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা অনুদান পাওয়া যায়।