রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহালের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। ফলে এই সময়ে আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করার সুযোগ থাকলো না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) মামলার সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, এর আগে গত ৪ অক্টোবর আপিল বিভাগের বিচারপতি বোরহান উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন।
আদালতে আপিল আবেদনের ওপর আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিক। তাহেরের পরিবারের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে অধ্যাপক তাহেরের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি নিহতের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চার জনকে ফাঁসির আদেশ ও দুই জনকে বেকসুর খালাস দেন। খালাসপ্রাপ্ত চার্জশিটভুক্ত দুই আসামি হলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী। ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ।
পরে নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন। সেসব আবেদনের শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল ওই মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট।
ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়েছে যে দুই আসামির তারা হচ্ছেন, একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম। যে দুই জনের ফাঁসির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে তারা হচ্ছেন, মো. জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম এবং নাজমুল আলমের সমন্ধি আব্দুস সালাম।
পরে হাইকোর্টের সে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করা হয়। আপিলের শুনানি শেষে গত ৫ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বধীন আপিল বিভাগ রায় ঘোষণা করেন।
ওই রায়ে অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং নিহত তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। পাশাপাশি দুই আসামি নাজমুল আলম ও আব্দুস সালামের যাবজ্জীবন দণ্ডও বহাল রাখেন আদালত।
এরপর গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বধীন আপিল বিভাগের স্বাক্ষরের পর ৬৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় পর্যবেক্ষণসহ প্রকাশিত হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন নিহত ড. এস তাহের আহমেদ। তিনি জীবিত থাকলে একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন কোনদিন ‘অধ্যাপক’ হতে পারবেন না– এমন আশঙ্কা থেকেই তাহেরকে খুন করেন শিক্ষক মহিউদ্দিন।