রাবি ছাত্রলীগের হল সম্মেলন উপলক্ষে মিছিল স্লোগানে মুখরিত মেয়েদের হলগুলো ; ছয় হলে প্রার্থী ৭৩

Chapai Chapai

Tribune

প্রকাশিত: ৪:২১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৩, ২০২২

বিশেষ প্রতিনিধিঃ ২০২২ সালের ৮ মার্চ নারী দিবসের দিনে মতিহারের সবুজ চত্বরের মেয়েদের হল গুলো ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ ‘শিক্ষা শান্তি প্রতি, ছাত্রলীগের মূলনীতি’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয়। যা রাবি ছাত্রলীগের ইতিহাসে সফলতার একটি অংশ। ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীল সংগঠনের দীর্ঘ সময়ের অভয়ারণ্য ছিলো রাবি। এই ক্যাম্পাসে মেয়েদের হলে ছাত্রলীগের মিছিল প্রায় অসম্ভব বিষয় ছিলো। এ বছর নারী দিবসে এই ঐতিহাসিক মিছিলে আবেগ আপ্লূত রাবি ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতৃবৃন্দ। রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রশংসা করছেন তারা। হল সম্মেলন না হলে হয়তো নারী নেতৃত্বের এই জাগরণ তৈরি হতো না৷

১৪ মার্চের হল সম্মেলনে মেয়েদের ছয়টি হলের প্রার্থী সংখ্যায় ইতিহাস তৈরি করেছে রাবি ছাত্রলীগ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক আবুল বাশার জানান; আগামী ১৪ মার্চ সমন্বিত হল সম্মেলনে মেয়েদের ছয়টি হলে প্রার্থী সংখ্যা ৭৩ জন। সবচেয়ে বেশি প্রার্থী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলে ২২ জন। এছাড়াও মুন্নুজান হলে ১৭, বেগম রোকেয়া হলে ১০, রহমতুন্নেসা হলে ৮ জন, তাপসী রাবেয়া হলে ৭ জন ও খালেদা জিয়া হলে ৯ জন।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। মতিহারের এই সবুজ চত্বরে ছাত্রলীগ রাজনৈতিক ভাবে সবসময় প্রতিকূলতার মধ্যে ছিলো। ক্যাম্পাসের মৌলবাদী সংগঠন ছাত্রশিবিরের হামলায় এ পর্যন্ত ছাত্রলীগের ৭ জন নিহত হয়েছেন। মেয়েদের হল গুলোতে একসময় ছিল ছাত্রশিবিরের নারী শাখা ছাত্রী সংস্থার আধিপত্য। পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে অর্ধশতাধিক কর্মীর। এমন অবস্থায় মেয়েদের হলে হলে ছাত্রলীগের এমন জাগরণ নতুন মাইলফলক মনে করছেন অনেকেই।

সম্মেলনের নতুন তারিখ ঘোষণার পরপরই প্রতিদিন মেয়েদের বিভিন্ন হলের ছাত্রলীগ কর্মীদের পদচারণায় মুখরিত থাকছে দলীয় টেন্ট ও টুকিটাকি চত্বর। এই হল সম্মেলনে মেয়েদের হলের প্রার্থীদের রঙিন ব্যানার ফেস্টুনে নতুন রুপে সেজেছে ক্যাম্পাস।

আসন্ন হল সম্মেলনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল ছাত্রলীগের প্রার্থী তাজরিন খান মেধা বলেন;

‘মেয়েদের হল রাজনীতি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ঝিমিয়ে পরেছিল ছাত্রীহল গুলো। মেয়েরা আগে রাজনীতি ভয় পেতো, সংকোচ ছিল তাদের মনে রাজনীতি করার প্রতি। কিন্তু বর্তমানে হল সম্মেলন-২০২২ উপলক্ষে জেগে উঠেছে রাবির ছাত্রীহল গুলো। দীর্ঘ দশ বছর পর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা হল, মন্নুজান হল এবং রোকেয়া হল “জয় বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হওয়ার মাধ্যমে রাবির নারী নেতৃত্ব আবার জেগে উঠেছে এই জানান দিয়ে গেছে। এই উৎসবমুখর আমেজ, এই উৎসাহ, রাজনীতির প্রতি ভালোবাসা চিরকাল থাকবে বলে আমি কামনা করি।

মতিহারের এই ক্যাম্পাসে ছেলেদের হলগুলোতে ছাত্রলীগের আধিপত্য থাকলেও মেয়েদের হল গুলোতে ছাত্রলীগের মিছিল কবে হয়েছিলো সেটা মনে করা কঠিন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টানা ১৩ বছর থাকলেও সরকার দলীয় এই সংগঠন টির রাবির মেয়েদের হল গুলোতে কখনোই তেমন বড় কর্মী বাহিনী তৈরি হয়নি।

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১৩ সালে তখনকার পাঁচটি হলের মধ্যে তিনটি হলে প্রেস কমিটি দেন তৎকালীন সভাপতি আহম্মদ আলী মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আবু হুসাইন বিপু। অন্য দুটিতে কমিটি দেওয়া সম্ভব হয়নি। ২০১৫ সালে ছেলেদের সব হলের সম্মেলন হলেও মেয়েদের হল গুলোতে সম্মেলন সম্ভব হয়নি, এমনকি পাঁচটি হলের একটিতেও প্রেস কমিটিও সম্ভব হয়নি।

রাবিতে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বের প্রতিবন্ধকতা :
৯০ দশক পর্যন্ত রাবিতে রাজনীতিতে মেয়েদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ থাকলেও ২০০১ সালে বিএনপি জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে রাবিতে মৌলবাদী সংগঠন ছাত্রশিবিরের একক আধিপত্য তৈরি হয়। এমন প্রতিকূল পরিবেশে মেয়েদের রাজনীতি করা খুবই দুঃসাহসিক ছিলো। ছাত্রশিবিরের নারী ইউনিট ছাত্রীসংস্থার দখলে যায় মেয়েদের হলগুলো। ছাত্রলীগ করলে হল প্রভোস্ট, বিভাগের বিএনপি জামাতপন্থী শিক্ষকদের রোষানলে পড়তে হয়েছে। রাবির বেশিরভাগ বিভাগের শিক্ষকরাই ছিলেন বিএনপি জামাতপন্থী। ছাত্রলীগের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকলেই ছাত্রত্ব হারানোর ভয়, মার্কস কম দেওয়া, হুমকি র স্বীকার হতে হতো। তবে সকল প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েও রাবি ছাত্রলীগের প্রতিটি কমিটিতে ৫-৬ জন করে অদম্য নারী নেত্রী তৈরি হয়েছে।

২০২০ সালে জানুয়ারি তে হল সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হওয়ার পরই নতুন জাগরণ তৈরি হয় মেয়েদের ছয়টি হলে। অনিবার্য কারণবশত সম্মেলনের তিনদিন আগে সম্মেলন স্থগিত হয়। পরবর্তীতে করোনা মহামারীর কারণে আরো অনিশ্চিত হয়ে যায় হল সম্মেলন। গত মাসে সম্মেলনের তারিখ নতুনভাবে ঘোষনার পরপরই আবারো ফিরে প্রাণচাঞ্চল্য।

সাবেক বর্তমান ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের প্রত্যাশা মেয়েদের হলে ছাত্রলীগের এই জাগরণকে ধরে রাখতে হবে। সেই সাথে ছাত্রলীগ করার কারণে কোন মেয়ে যাতে নিজ বিভাগ বা হলে অবিচারের শিকার না হয় সেই বিষয়ে নজর রাখতে হবে। সেই সাথে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ সুষ্ঠধারার রাজনীতির চর্চা থাকলে রাবির হল গুলোও ছাত্রলীগের অন্যতম শক্তিশালী ইউনিটে পরিনত হবে।

আগামী ১৪ মার্চ সাবাস বাংলাদেশ মাঠে মেয়েদের ছয়টি সহ ১৭ টি হল ছাত্রলীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
এই হল সম্মেলনের মাধ্যমেই বর্তমান সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য রাবিতে প্রথম সাংগঠনিক সফরে আসছেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন