ট্রিবিউন ডেস্ক: প্রথমার্ধে ঠিক ব্রাজিলকে ‘ব্রাজিলে’র মতো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না; কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে সমর্থকদের মন ভরিয়ে দিয়েছেন নেইমার-ভিনিসিয়ুস-রিচার্লিসনরা। দ্বিতীয়ার্ধের ব্রাজিলকে দেখেই মনে হলো এই দলটি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারে। রিচার্লিসনের অসাধারণ জোড়া গোলে ২-০ ব্যবধানে সার্বিয়াকে হারিয়ে ফেবারিটের মতোই বিশ্বকাপ শুরু করলো ৫ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল।
শিরোপার অন্যতম দাবিদার ব্রাজিলকে প্রথমার্ধে গোল পেতে দেয়নি ইউরোপিয়ান দেশ সার্বিয়া। কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে প্রায় ৮৫ হাজার দর্শকের সামনে একের পর এক আক্রমণ করেও প্রথমার্ধে গোলের দেখা পায়নি সেলেসাওরা।
ফিফা র্যাংকিয়ের ১ নম্বর দল ব্রাজিল। ২১ নম্বরে সার্বিয়া। কাগজে-কলমে ব্যবধান স্পষ্ট। মাঠের খেলায় প্রথমার্ধে সেই ব্যবধান দেখাতে না পারলেও দ্বিতীয়ার্ধে ঠিকই ব্রাজিল দেখিয়েছে, তারা কতটা দুর্ধষ।
বল দখলের লড়াইয়ে ৫৯ ভাগ ছিল ব্রাজিলের, ৪১ ভাগ সার্বিয়ার। সার্বিয়ার জাল লক্ষ্যে ৯টি শট নিয়েছে ব্রাজিলিয়ানরা। যার ৮টিই ছিল লক্ষ্যে। সার্বিয়া নিয়েছে ৩টি। এর মধ্যে একটিও লক্ষ্যে ছিল না।
দ্বিতীয়ার্ধে সার্বিয়া খুব কমই বল পেয়েছে। সার্বদের ডিফেন্স ভেদ করে একের পর এ বল নিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করে ব্রাজিলিয়ানরা। তবে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররাও ছিল তৎপর। ব্রাজিলের মুহুর্মুহু আক্রমণ প্রতিরোধ করেছে তারা। লাতিন আমেরিকান দেশটিরও দুর্ভাগ্য, দুটি শট ফিরে এসেছে তাদের সাইড বারে লেগে।
প্রথমার্ধে শুরুতে খেলার নিয়ন্ত্রণ কিছুটা সার্বিয়ানদের পায়ে ছিলো। তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে খেলার নিয়ন্ত্রণ ব্রাজিলিয়ানদের কাছে আসলেও সার্বিয়ার ডি বক্সে বল নিয়ে প্রবেশ করার সাধ্য যেন ছিল না নেইমার-ভিনিসিয়ুসদের। রাফিনহা কয়েকবার সুযোগ পেয়েছিলেন; কিন্তু তার দুর্বল শট ব্রাজিলের পক্ষে গোল পেতে যথেষ্ট হয়নি।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে খেলার চিত্র পুরোপুরি পাল্টে যায়। ব্রাজিল যেন এককভাবেই দ্বিতীয়ার্ধে খেলেছে। সার্বিয়ান ডিফেন্স শুধু ব্রাজিলের আক্রমণ ঠেকানোতেই ব্যস্ত ছিল।
৬২তম মিনিটে প্রথম গোল করে ব্রাজিল। সুযোগ সন্ধানী রিচার্লিসন অসাধারণ এক শটে গোল করে এগিয়ে দেয় ব্রাজিলকে। গোল হজম করে কিছু কাউন্টার অ্যাটাকে উঠে আসে সার্বিয়ানরা।
কিন্তু ৭৩ মিনিটে নেইমার-ভিনিসিয়ুস-রিচার্লিসন কম্বিনেশনে অসাধারণ গোলটি আসার পর সার্বিয়াকে বলতে গেলে ব্রাজিল গোলমুখে আর খুঁজেই পাওয়া যায়নি। ৭৮তম মিনিটে ইনজুরির শঙ্কা নিয়ে নেইমার উঠে যান।
২৮ মিনিটে দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলো ব্রাজিল। থিয়াগো সিলভা বল পাস দিয়েছিলেন বক্সের মধ্যে। ভিনিসিয়ুস জুনিয়র একা ছিলেন। কিন্তু গোলরক্ষক সাভিচ ঝাঁপিয়ে পড়ে বল ক্লিয়ার করেন।
৩৫তম মিনিটে রাফিনহা দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তার বাম পায়ের দুর্বল শট গোলরক্ষকের হাতে চলে যায়।
৪১তম মিনিটে গোল্ডেন চান্স পেয়েছিলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। কিন্তু সার্বিয়ান ডিফেন্ডারদের চার্জের কারণে ভিনিসিয়ুস ভালো শট নিতে পারেননি। বল চলে যায় বাইরে।
প্রথমার্ধে গোলশূন্যভাবেই মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল এবং সার্বিয়া। দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নেমে ৪৬তম মিনিটেই গোলের দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন বার্সা তারকা রাফিনহা। সার্বিয়ার এক ডিফেন্ডারের কাছ থেকে বল কেড়ে নেন তিনি। সামনে ছিলো শুধু গোলরক্ষক। বলটা আলতো টোকা দিলে হয়ে যেতো। কিন্তু তিনি মেরে দেন গোলরক্ষকের শরীরে।
৪৯তম মিনিটে বক্সের সামনে ফ্রি-কিক আদায় করে নেন নেইমার। শট নেন তিনি। কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন সার্ব ডিফেন্ডাররা। কর্নার কিক করেন নেইমার। থিয়াগো সিলভার দুর্দান্ত এক হেড, ঘাড়ে বল লাগিয়ে দলকে রক্ষা করেন সার্ব ডিফেন্ডার।
৬২ মিনিটে গোল করে ব্রাজিল। অনেক কষ্টের পর আসে গোলটি। নেইমার বল নিয়ে ঢুকে পড়েন বক্সের মধ্যে। ডিফন্ডোরের সামনে বাধা পেলে সুযোগ বুঝে গোলে শট নেন ভিনিসিয়ুস। কিন্তু গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়ে ফিরিয়ে দেন বলটি। ফিরতি বলটিতেই আলতো টোকায় সার্বিয়ার জালে বল জড়িয়ে দেন রিচার্লিসন।
৭৩তম মিনিটে দ্বিতীয় গোল। রিচার্লিসনের এই গোলটি চোখে লেগে থাকার মত। বক্সের বাম প্রান্ত থেকে ডান-পায়ের টোকায় বক্সের মাঝে দাঁড়ানো রিচার্লিসনকে বলটি দেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। রিচার্লিসন প্রথমে বলটি নিয়ন্ত্রনে নেন। হালকা উপরে উঠে যাওয়া বলটিকে একটু সময় নিয়ে অসাধারণ এক বাইসাইকেল কিকে সার্বিয়ার জালে বল জড়ান তিনি।