১৮ ফেব্রুয়ারি শহীদ ড. শামসুজ্জোহা দিবস

Chapai Chapai

Tribune

প্রকাশিত: ৬:৩৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ১৮ ফেব্রুয়ারি ড. শামসুজ্জোহা দিবস। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় এই দিনে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মেইন গেটে শহীদ হন প্রক্টর ড. সৈয়দ মহম্মদ শামসুজ্জোহা। তিনিই প্রথম বাঙালি শহীদ বুদ্ধিজীবী। তার আগে কোন বাঙালি বুদ্ধিজীবী এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদ হওয়ার উদাহরণ নেই।

দিনটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসাবে পালিত হয়। তবে ড. জোহার শাহাদতের দিনটিকে দীর্ঘদিন ধরে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু ৪৮ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ প্রশাসক প্রফেসর প্রদীপ কুমার পান্ডে স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচির সময় জানানো হয়েছে।

কর্মসূচি সমূহ; সূর্যোদয়ের সাথে সাথে কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল ৯টায় শহীদ ড. জোহার সমাধি ও জোহা স্মৃতিফলকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং সকাল ১০টায় শহীদ জোহা স্মরণে রসায়ন বিভাগে আলোচনা সভা।

এদিন সকাল ৯:১০ মিনিটে রসায়ন বিভাগ, সকাল ৯:২০ মিনিটে রাবি শিক্ষক সমিতি, সকাল ৯:২৫ মিনিটে বিভাগ ও আবাসিক হলসমূহ, বিভিন্ন পেশাজীবী সমিতি ও সংগঠন এবং সকাল ৯:৪০ মিনিটে রাবি স্কুল ও শেখ রাসেল মডেল স্কুলের পক্ষ থেকে শহীদ ড. জোহার সমাধি ও জোহা স্মৃতিফলকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে।

এছাড়া বাদ জুমআ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআনখানি ও বিশেষ মোনাজাত, বিকেল ৪:৩০ মিনিটে শহীদ শামসুজ্জোহা হলে দোয়া মাহফিল এবং সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিটে শহীদ শামসুজ্জোহা হলে প্রদীপ প্রজ্বালন ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় রচনা প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছে। শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য খোলা থাকবে।

সবশেষে সন্ধ্যা ৭টায় জুবেরী ভবনে রাবি শিক্ষক সমিতির আয়োজনে আলোচনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ যা ঘটেছিলো রাবিতেঃ
পশ্চিম পাকিস্তানের শাষকগোষ্ঠীর নানান অবিচার বৈষম্য ও বাংলার মানুষের উপর নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে এদেশের আপামর জনতা ফুঁসে ওঠে। সাধারণ জনগণের আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ ৩৫ জনের নামে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ এনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। মামলার পরে বাংলার ছাত্র জনতর আন্দোলন আরও তীব্র হয়। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি গণ-আন্দোলনে ছাত্রনেতা আসাদ শহীদ হন। কিছুদিন পরেই ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে শহীদ হন সার্জেন্ট জহুরুল হক।

এসব ঘটনার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও চরম আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন এবং তারা পরে বিশাল মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রধান ফটকের দিকে এগোতে থাকেন। ড. শামসুজ্জোহা এ সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন নির্দেশ দিচ্ছিলেন। শিক্ষার্থীরা ড. জোহার নির্দেশেই শৃঙ্খলভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

সেই আন্দোলন ছিল পাকিস্তান সরকারের অন্যায় শাসন শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন। বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন। মূলত এ বিশাল আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের শক্তি হিসেবে কাজ করেছিল ড. শামসুজ্জোহার বলিষ্ঠ নির্দেশনা ও ভূমিকা। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেটা ভালোভাবেই খেয়াল করেছিল। ড. শামজ্জোহা ছিলেন সামনের সারিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে।
সে সময় পাকিস্তানি সেনারা শিক্ষার্থীদের দিকে বন্দুক তাক করে রেখেছিল।

ড. শামসুজ্জোহা সেনাদের লক্ষ্য করে বললেন,

‘এ দেশের আর কোনো শিক্ষার্থীর বুকে যেন একটাও গুলি না লাগে। কোনো গুলি যদি লাগে, সেটা যেন আমার বুকে ছোঁড়া হয়’।

শিক্ষার্থীরা যেন আন্দোলনে তুমুল শক্তি ফিরে পেল। নিষ্ঠুর পাকিস্তানি সেনারা তাই আর দেরি করল না। আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ড. জোহাকে তারা গুলি করল। শহীদ হলেন আন্দোলনের প্রাণশক্তি শিক্ষার্থীর প্রিয় শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা।

পোস্টটি শেয়ার করুন