৪০ বছর যাবত অবৈধভাবে নামের পাশে ডাক্তার লিখে করছেন চিকিৎসা

Chapai Chapai

Tribune

প্রকাশিত: ৪:১৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৮, ২০২২

নাঈম হোসেন: রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানাধীন কোর্ট ঢালুর মোড়ে ডিএমএফ কোর্স সম্পন্ন এম এম এ জাফর নামের এক ব্যক্তি ৪০ বছর ধরে ভিজিটিং কার্ডে নামের পূর্বে ডাক্তার পরিচয় দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেই সাথে দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা সেবা। অন্যদিকে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ এর ২৯ ধারা অনুযায়ী বিএমডিসি এর নিবন্ধনভুক্ত মেডিকেল বা ডেন্টাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার (Dr.) পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না বলে উল্লেখ করা হয়েছে ।

স্থানীয়রা জানান, অভিনব প্রতারণা কিনা তারা জানেন না। ৪০ বছর ধরে ওই ডাক্তার চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

সচেতনমহল থেকে জানান, ডাক্তার না হয়েও নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে তিনি বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন ।

ডি.এম.এফ কোর্স সম্পন্ন এম.এম.এ জাফর গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, এমন কোন রোগ নেই যার চিকিৎসা তিনি জানেননা। তিনি একধারে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ, গাইনী বিশেষজ্ঞ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সহ ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, যক্ষা সহ সকল রোগের চিকিৎসা করেন। এক কথায় তিনি সর্বরোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি ভিজিট নেন ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। আবার কিছু কিছু অসহায় দরিদ্র রোগীদের খরচে ছাড় দেন। এইভাবে প্রায় ৪০ বছর ধরে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তার প্রতিষ্ঠানটি এলাকায় মিনি হাসপাতাল নামেও পরিচিত।

তিনি গ্রীন মেডিকেল ষ্টোর নামের একটি ফার্মেসী যুক্ত রুমে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জানান, ডাক্তার শব্দ ব্যবহার করে নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দেন। যাতে রোগী বুঝতে পারেন।

অভিযোগের সত্যতার সন্ধানে দেখা যায়, তার প্রতিষ্ঠানে রোগীদের লম্বা লাইন সাথে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টিভরাও ভিড় জমিয়ে দাড়িয়ে আছে। ডাক্তার এর পেছনে বেডে চলছে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা। দেওয়া রয়েছে স্যালাইন।

ডাক্তার পরিচয় দানকারী এম এম এ জাফরের সাথে কথা বললে তিনি অকপটে স্বীকার করে বলেন, আমি সকল রোগের চিকিৎসা করি ও জানি। আমি ডাক্তার কথাটা আমার পরিচয় বহনের জন্য লিখেছি। আইনগত ভাবে আমি ডাক্তার কথাটি লিখতে ও বলতে পারিনা।

চিকিৎসার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিশুদের যে চিকিৎসা আমি প্রদান করি সেটা শিশু বিশেষজ্ঞ ডক্টর এ বি সিদ্দিক ও ভুল ধরতে পারেনি এছাড়া অনেক এমবিবিএস ডক্টর এর চিকিৎসা আমি ভুল ধরেছি এবং তারাও হাজার হাজার ভূল করে যেগুলো আমি নিজে দেখেছি।

ভিজিটিং কার্ডে নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভিজিটিং কার্ড নামের আগে ডা: এম, এম, এ জাফর না লিখলে আমার কাছে কোন রোগী আসবে না। প্রচার করার জন্যই নামের আগে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করেছি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, অনেক এমবিবিএস ডাক্তার ভুল করেন। আমি ডাক্তার না ঠিক আছে কিন্তু এমবিবিএস ডাক্তাররা চিকিৎসার নামে রোগী মেরে ফেলছে না? অনেক রোগী এমবিবিএস ডাক্তারের লেখা প্রেসক্রিপশন আমার কাছে নিয়ে আসে। এই দেখেন অনেক রোগী আছে এখানে যারা এমবিবিএস ডাক্তারের কাছে থেকে ভালো চিকিৎসা না পেয়ে আমার কাছে প্রেসক্রিপশন নিয়ে এসেছে। যখন এমবিবিএস ডাক্তারের লেখা প্রেসক্রিপশন ভুল দেখি তখন আমি সংশোধন করে রোগ নিরাময়ের জন্য ঔষধ বদলে দেই। এমন কোন ডাক্তার নাই যে আমার চিকিৎসায় ভুল ধরে।

তাঁর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমবিবিএস ডাক্তাররেরা বলেন এম, এম, এ জাফর (ডিএমএফ) এক বছর মেয়াদী কোর্স করে কত বড় ডাক্তার হয়েছে, কিসের ভিত্তিতে সে ডাক্তার পরিচয় দেয় যে, এমবিবিএস ডাক্তারের লেখা প্রেসক্রিপশন ভুল ধরে এবং ঔষধ বদলে দেয়। আমরা এ বিষয়টা সহজ ভাবে নিব না। আমরা অবশ্যই তার বিরুদ্ধে লিগ্যাল অ্যাকশনে যাব।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন রাজশাহী ডাক্তার আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক এর মুঠোফোন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি (ডিএমএফ) কোর্স করলেই নিজেকে ডাক্তার বলে পরিচয় দিতে পারে না। তিনি কোনভাবেই ভিজিটিং কার্ডে নামের আগে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারে না। এটা তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। আমরা সরেজমিনে গিয়ে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় অফিসে যোগাযোগ করা হলে উপ-পরিচালক হাসান আল মারুফ বলেন, একজন ডি,এম,এফ কোর্স করা ব্যক্তি কোন ভাবেই ডাক্তার পরিচয় দিতে পারে না। এরা উপজেলা পর্যায়ে গ্রাম্য চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতে পারবে অথবা উপজেলা পর্যায়ে ডাক্তার সহকারী হিসেবে কাজ করতে পারবে। কিন্তু নামের আগে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারবে না। ভিজিটিং কার্ডে নামের আগে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করে রীতিমতো জনগণ ও সরকারের সাথে প্রচারণা করছেন তিনি। একই সাথে স্বাস্থ্যসেবার মান ক্ষুন্ন করছেন। আমরা সরজমিনে গিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব করা হবে বলেও জানান ভোক্তা অধিকারের উপ-পরিচালক হাসান আল মারুফ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা বলেন, এই নামধারী ডাক্তারের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

গণমাধ্যমকর্মীরা তথ্য সংগ্রহ করে আসার সময় ওই নামধারী ডাক্তার সহ তার ছেলে পথরোধ করে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য হুমকি দেয়।

পোস্টটি শেয়ার করুন