৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় পরিচালিত করার সূচনা করেন জিয়াউর রহমান: খায়রুজ্জামান লিটন

Chapai Chapai

Tribune

প্রকাশিত: ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৩০, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন; ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বারবার সর্তক করা হলেও তিনি সতর্কবানী বিশ্বাস করেননি। যে জিয়াউর রহমানকে চারটি প্রমোশন দিয়ে মেজর থেকে মেজর জেনারেল করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেই জিয়াউর রহমান খন্দকার মোশতাকের কাঁধে বন্দুক রেখে ডালিম, রশীদ, ফারুক, হুদাদেরকে দিয়ে হত্যাকাণ্ডটি করলেন। তারপরে তিনি খুনি মোশতাককে কয়েকদিনের জন্য ক্ষমতায় বসালেন। তারপর তাকে কারাগারে পাঠালেন এবং খুনিদের বিচার করা যাবে না-এই মর্মে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে পরবর্তীতে সংসদে আইন হিসেবে পাস করেন জিয়াউর রহমান। সেই কারণে খুনিদের বিচার দীর্ঘদিন করা যায়নি। ৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় পরিচালিত করার সূচনা করেন জিয়াউর রহমান। পরবর্তীতে এরশাদ সাহেব এবং তারপরে খালেদা জিয়া সেই পথেই হেটেছে।’

সোমবার বিকেলে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর পার্কে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখা আয়োজিত শোক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন শোক সমাবেশে বলেন, দেশে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দরকার নেই। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতোই ক্ষমতাসীন সরকার ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে যেভাবে নির্বাচন, আগামীতেও বাংলাদেশে সেইভাবে নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগকে খেলার ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আওয়ামী লীগ কখনো চোরাপথে ক্ষমতায় আসেনি, দরকারও নেই। আওয়ামী লীগের জন্য লক্ষ-কোটি জনতা আছে।

অরাজক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করলে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে হুঁশিয়ারি দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আগামী ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, আমরা শুনতে পাচ্ছে, সেপ্টেম্বর মাস থেকে বিএনপি সারাদেশে জানান দেবে, আওয়াজ দেবে। আমাদের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত থাকবেন। বিএনপি যদি কোন অরাজক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করে, তাহলে তার দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, ৭৫ পরবর্তী সারা বাংলাদেশে নানা রকম অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। যারা দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ দিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষকে হত্যা-গুম করেছিল, অনেকের লাশও পাওয়া যায়নি। তারাই আজ মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলে। যেদিন মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে শিশু শেখ রাসেলকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল, সেদিন কোথায় ছিল মানবাধিকার? যেদিন শেখ পরিবারের দুই পুত্রবধূকে হত্যা করা হয়েছিল,যাদের হাতের মেহেদী তখন শুকায়নি, সেদিন কোথায় ছিল মানবাধিকার? যেদিন জিয়াউর রহমান হ্যা/না ভোটে হ্যা বাক্সে ভোট ভরে দিয়ে নিজের জনপ্রিয়তা-গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণের চেষ্টা করলো- সেদিন মানবাধিকার কোথায় ছিল? আমরা যদি বলতে চাই ১ঘন্টা বলা যাবে। তারা কীভাবে ইচ্ছে করে পায়ের তলে মানবাধিকার নষ্ট করেছিল।

আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যানে কাজ করছে জানিয়ে রাসিক মেয়র বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নে বিশ্বাসী। আমরা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছি। দেশের সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান।

খায়রুজ্জামান লিটন আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের ব্যক্তি ও সুফলভোগীদের খুঁজে বের করতে হবে। এজন্য কমিশন গঠনের জোর দাবি উঠেছে। জিয়াউর রহমান ও তাঁর পরিবার ছাড়া আর কারা কারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে সুফলভোগী, তাদের খুঁজে বের করতে হবে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকারের নির্মম শাসন, হত্যা-নির্যাতন, রগ কাটা, বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, মায়ের সামনে কন্যানে ধর্ষণ করা সহ এমন কোন কাজ নেই, যা তারা করেনি। সেই পাপে তারেক জিয়া দেশের বাইরে পলাতক, খালেদা জিয়া জেলখানায় ছিল সাজাপ্রাপ্ত হয়ে। নেত্রী শেখ হাসিনার অনুকম্পায় এখন বাড়িতে আছে। আজকে বিএনপি মনে করে তারা আবার ক্ষমতায় যাবে, আবার হাওয়া ভবন হবে, সেখানে মানুষ আসবে চাকরি নেওয়ার জন্যে, কোটি কোটি টাকা দিয়ে তাদের বাক্স ভরে দিয়ে যাবে। এই স্বপ্ন দেখছে বিএনপি। তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না।

সমাবেশে প্রধান বক্তা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের সেকেন্ড হোম হচ্ছে রাজপথ। পঁচাত্তরের খুনিদের জন্য রাজপথ না, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীদের জন্য রাজপথ না, জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের জন্য রাজপথ না। দুর্নীতিবাজ বিএনপি-জামায়াতের জন্য রাজপথ না। রাজপথ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের জন্য, রাজপথ জনগণের জন্য।
তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী আছেন বলেই বাংলাদেশের মানুষ ভালো আছে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী আছেন বলেই সংকটেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুহঃ জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শরিফুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন- জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব রুহুল আমিন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌসি ইসলাম জেসি।

এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পৌর মেয়র মোঃ মোখলেসুর রহমান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুর রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ সাইফ জামান আনন্দ।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আব্দুল আওয়াল গনি জোহা, সাধারণ সম্পাদক ফায়জার রহমান কনক, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাকিনা খাতুন পারুল, সাধারণ সম্পাদক হালিমা খাতুন, যুব মহিলা লীগের সভাপতি এ্যাড. ইয়াসমিন সুলতানা রুমা, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাহিদ শিকদার, বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বৃন্দসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের প্রায় ১৫ হাজার নেতাকর্মী।

পোস্টটি শেয়ার করুন