মরিয়ম সেঁজুতি : ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য জনবান্ধব বাজেট প্রণয়নের পরিকল্পনা করছে সরকার। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় ১৩০টি কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের প্রায় ১২ কোটি নাগরিককে সহায়তা দেয়া হবে। দরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে ব্যয় করা হবে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ লক্ষ্যে উপকারভোগীর সংখ্যা এবং তাদের ভাতার পরিমাণ আরো বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে ৫৮ লাখ এক হাজার প্রবীণ প্রতি মাসে ৬০০ টাকা করে পাচ্ছেন। ২০২৪-২৫ সালে তাদের সংখ্যা দুই লাখ বাড়বে। অর্থাৎ ৬০ লাখ প্রবীণ সরকারি ভাতা পাবেন। কোনো প্রতিবন্ধী আর ভাতার বাইরে থাকবে না। বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত বা দুস্থ নারী, জটিল রোগে আক্রান্ত রোগী, অসহায় মা-শিশু ও হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষের দিকে থাকবে বিশেষ নজর। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করে যারা দেশ স্বাধীন করেছেন সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ১০ হাজার বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, আগামী বাজেটে সবার দাবি পূরণে তিনি সচেষ্ট থাকবেন। যদিও মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া সিনিয়র নাগরিকদের ভাতা বাড়ানো হবে।
জানা গেছে, কাউকে বাদ দিয়ে নয়, বরং জাতীয় বাজেট থেকে দেশের সব নাগরিক যাতে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সুবিধা পান সেই বিষয়ে এবার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আগামী ৬ জুন প্রথমবারের মতো মহান সংসদে বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
নতুন বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বাজেটের বড় অংশ ব্যয় করা হলেও অর্থের অপচয়, অনিয়ম ও বিভিন্ন স্তরে নানামুখী দুর্নীতির কারণে সঠিকভাবে উপকারভোগীদের কাছে ভাতা পৌঁছায় না। আবার অনেক সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তাদের পছন্দমতো তালিকা প্রণয়ন করে ভাতা ও নগদ সহায়তা উত্তোলন করে থাকে। ফলে সামাজিক নিরাপত্তার আওয়ায় যেসব কর্মসূচি রয়েছে তা বাস্তবায়ন সবসময় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অথচ দারিদ্র্য বিমোচন এবং পিছিয়ে পড়া মানুষকে এগিয়ে নিতে এ কর্মসূচির বিকল্প নেই সরকারের সামনে। এ অবস্থায় সমাজের পিছিয়ে পড়া প্রকৃত অসহায় নাগরিকরা যাতে উপকারভোগীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন সেই বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে। একই সঙ্গে ভাতার টাকা যাতে উপকারভোগীদের হাতে পৌঁছায় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করবে সরকার।
এ লক্ষ্যে চলতি মাসের শুরুতে দেয়া এক পরিপত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সব টাকা উপকারভোগীর জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে নিবন্ধিত মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে দিতে হবে। আগামী ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে তা নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে ক্রমবর্ধমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে হিমশিম খাওয়া দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দিতে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা আরো বাড়াতে যাচ্ছে।
বর্তমান ২৪টি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রায় ১১ কোটি ৮০ লাখ মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে। আগামীতে এ সংখ্যা আরো অন্তত ২০ লাখ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায় পর্যায়ক্রমে দেশের আট কোটি মানুষকে নিয়ে আসতে চায় সরকার। ইতোমধ্যে প্রায় এক লাখ মানুষ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। প্রতিদিন এ সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি টিসিবির কার্যক্রম বাড়িয়ে কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা, ওএমএস (খোলা বাজারে বিক্রি) এবং খাদ্যবান্ধক কর্মসূচির আওতায় আরো প্রায় ১ কোটি মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের নানাভাবে ভর্তুকি দেয়া, নগদ সহায়তা, খাদ্য সহায়তা, স্বাস্থ্য সহায়তা এবং শিক্ষা সহায়তার মতো বড় বড় কর্মসূচি রয়েছে। এসব খাতে আরো কয়েক কোটি মানুষ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় রয়েছেন। এর বাইরে ৬০ লাখ প্রবীণ, ৩২ লাখ প্রতিবন্ধী, ১৫ লাখ ৬৪ হাজার মা ও শিশু, প্রায় ২৬ লাখ বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত, ২ লাখ মুক্তিযোদ্ধা এবং ৫০ হাজার জটিল রোগী নিয়মিত ভাতার আওতায় আছেন। বর্তমান দেশের প্রায় ২২ লাখ মানুষ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে মুনাফা পাচ্ছেন। এ কার্যক্রমকেও এগিয়ে নেয়ার কর্মসূচি থাকবে নতুন বাজেটে।
সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন খাতে নগদ প্রদান, খাদ্যনিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানমূলক কার্যক্রম, উপবৃত্তি কার্যক্রম, নগদ উপকরণ হস্তান্তর বিশেষ কার্যক্রম, ঋণ সহায়তা কার্যক্রম, বিশেষ জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তা, বিবিধ তহবিল ও কার্যক্রম, উন্নয়ন খাতের কার্যক্রমগুলো চলমান (আশ্রয়ন প্রকল্প) ও উন্নয়ন খাতের কার্যক্রমগুলোর নতুন প্রকল্প ও কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১২ কোটি মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে আসা হবে। সম্প্রতি মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিতে নতুন সুবিধাভোগীদের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে বেশির ভাগ প্রকল্পের ভাতার পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকছে। এছাড়া অর্থের অপব্যবহার ও দুর্নীতি কমাতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সব কার্যক্রমকে নতুন কাঠামোর আওতায় আনতে চলতি মাসের শুরুতে দুটি পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সরকার দুটি বড় প্রকল্পের মাধ্যমে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত বা দুস্থ নারী হিসেবে ভাতা পাওয়া সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়াবে। তহবিল সীমাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন কর্মসূচির ভাতার পরিমাণ বাড়াানো যায়নি। এছাড়া নতুন বাজেট প্রণয়নে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মধ্যপ্রাচ্য সংকট এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়টি মাথায় রাখা হচ্ছে। এ সময়ে কীভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং রপ্তানি বাড়ানো যায় সে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে অর্থ বিভাগ। এছাড়া ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি উত্তরণের তিন শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। তাই দারিদ্র্য বিমোচন ও দরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে।
সরকার মনে করছে, জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা বিবেচনায় নিয়ে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ালে তা দরিদ্রদের স্বস্তি দেবে। দেশে গত ১৩ মাস ধরে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের বেশি। এ কারণে দ্রব্যমূল্য কমাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে কর ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি, দারিদ্র্য দূরীকরণে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প থেকে সরে আসার মতো পদক্ষেপ নিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান সম্প্রতি বাজেটসংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে জানান, মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে। এজন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হবে। এক কোটি মানুষকে টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি দিয়ে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ওএমএস কার্যক্রম, কাবিখা, ও সরকারের খাদ্যবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচির জোর দেয়া হবে নতুন বাজেটে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।
প্রবীণ ভাতার আওতা বাড়ছে : চলতি অর্থবছরে ৫৮ লাখ এক হাজার প্রবীণ প্রতি মাসে ৬০০ টাকা করে পাচ্ছেন। ২০২৪-২৫ সালে তাদের সংখ্যা দুই লাখ বাড়বে। অর্থাৎ ৬০ লাখ প্রবীণ সরকারি ভাতা পাবেন।
সরকার চলতি অর্থবছরে ‘বয়স্ক ভাতা’ কর্মসূচিতে চার হাজার ২০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। বার্ষিক গড় আয় ১০ হাজার টাকার কম এমন ৬৫ বছরের বেশি বয়সি পুরুষ ও ৬২ বছরের বেশি বয়সি নারীকে বয়স্ক ভাতা দেয়া হচ্ছে। দেশের ২৬২ উপজেলায় সব যোগ্য প্রবীণ নাগরিক এ সুবিধা পাচ্ছেন। উপকারভোগীর সংখ্যা আট লাখ বাড়ানো হলে বাকি ২৩৩ উপজেলায় সব যোগ্য ব্যক্তিকে এ প্রকল্পের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আর প্রতিবন্ধীর সংখ্যা তিন লাখ ৩৪ হাজার বাড়ানো হবে। বর্তমানে এ সুবিধা পাচ্ছেন ২৯ লাখ জন। পাশাপাশি নতুন করে হিজড়া সম্প্রদায় উপকারভোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ২২৯ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এছাড়া মা ও শিশুসহায়তা কর্মসূচির আওতা ২০ শতাংশ এবং ভাতার অঙ্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বর্তমানে ১৩ লাখ ৪ জন এ সুবিধা পাচ্ছেন। আগামী অর্থবছরে এ কর্মসূচিতে নতুন মুখ যুক্ত হবে ২ লাখ ৬০ হাজার। ফলে মা ও শিশুসহায়তার উপকারভোগী দাঁড়াবে ১৫ লাখ ৬৪ হাজারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, পর্যায়ক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। চলতি অর্থবছরে বিধবা, পরিত্যক্ত বা দুস্থ নারীদের জন্য এক হাজার ৭১১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রায় ২৫ লাখ ৭৫ হাজার নারী এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। আরো দুই লাখ মানুষ এই সুবিধায় যুক্ত হবেন।
এ কর্মসূচির আওতায় ১৮ বছর ও এর বেশি বয়সি নারী যাদের বার্ষিক গড় আয় ১২ হাজার টাকার নিচে তারা প্রতি মাসে ৫৫০ টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন।
মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ভাতা ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হচ্ছে। এছাড়া ৮০ বছর বা এর বেশি বয়সি প্রবীণ নাগরিকরা আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে প্রতি মাসে ৯০০ টাকা হারে ভাতা পাবেন। এটি বর্তমানে ৬০০ টাকা।
ক্যানসার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগীদের জন্য আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় চলতি অর্থবছরে ৩০ হাজার উপকারভোগীকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা দেয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার করা হবে। দেশের গর্বিত সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ১০ হাজার বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার সুপারিশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। বর্তমানে দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছেন।
এছাড়া সরকারি কর্মচারীদের অবসর ও পারিবারিক অবসর ভাতাও দেয়া হচ্ছে। এসব কর্মসূচির সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ কোটি ২৮ লাখ ৪৭ হাজার। এর বাইরে ১১টি কর্মসূচির মাধ্যমে ৩ কোটি ৬২ লাখ ৯৭ হাজার জনকে বিভিন্নভাবে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তার সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪ কোটি ৯১ লাখ ৪৪ হাজার মানুষ। এর মধ্যে ভিজিএফে ১ কোটি ৮০ লাখ, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ৬২ লাখ ৫০ হাজার, ওএমএসে ৩৭ লাখ ৩৫ হাজার, জিআরে (খাদ্য) ৩৩ লাখ, কাবিটায় ১৮ লাখ ২০ হাজার ও কাবিখায় ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষ খাদ্যসুবিধা পাচ্ছে। ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মাধ্যমে দেশে সামাজিক নিরাপত্তাবলয় পরিচালিত হয়।
_ভোরের কাগজ
প্রকাশক ও সম্পাদক: মু. আতিকুর রহমান সুমন
Copyright © 2025 চাঁপাই ট্রিবিউন. All rights reserved.