দুই দিনে ঢাকায় ৫৬২টি অভিযান

Chapai Chapai

Tribune

প্রকাশিত: ৩:৫৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৪, ২০২৪

ট্রিবিউন ডেস্ক:অবকাঠামোগত দুর্বলতা, নিয়মবহির্ভূতভাবে ভবনের ব্যবহার ও অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকাসহ নানা অনিয়মের কারণে একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনায় দিনে দিনে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। বড় দুর্ঘটনার পর অবৈধভাবে নির্মাণ ও ব্যবহারকারী ভবনমালিকদের বিরুদ্ধে দুই-চার দিন লোকদেখানো অভিযান চললেও এসব অনিয়মের প্রশ্রয়দাতারা বরাবরই থাকছে শাস্তির বাইরে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের তদারককারী সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ভবনমালিকদের কাছ থেকে এককালীন মোটা অঙ্কের উৎকোচ এবং নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে থাকে। যে কারণে ভবনমালিকরাও নিয়মবহির্ভূতভাবে ভবনের ব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়ম করেও পার পেয়ে যায়।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণহানির পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ৫৬২টি বিশেষ অভিযান চালিয়েছে। তবে ওইসব অভিযানেও রেস্টুরেন্ট, কেমিক্যাল গোডাউন বা গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানমালিকদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, নিয়মবহির্ভূতভাবে ভবন নির্মাণ, আবাসিক ভবনকে বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে ব্যবহার এবং অগ্নিঝুঁকির তোয়াক্কা না করে অনিরাপদভাবে একই ভবনে বিপুলসংখ্যক হোটেল-রেস্টুরেন্টের ব্যবসা জাঁকিয়ে বসা বন্ধ করতে হলে এসব অনিয়মকারীর পাশাপাশি তাদের প্রশ্রয়দাতাদেরও সাজার আওতায় আনা জরুরি। তা না হলে বেইলি রোড ট্র্যাজেডির মতো দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না। নিমতলী, চুড়িহাট্টা, মগবাজার ও বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের পর বেইলি রোডের ঘটনাটি রাজধানী ঢাকার নগরজীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি আবার আলোচনায় নিয়ে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগর পরিকল্পনা, ভবনের নকশা, নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা, ভবনের ব্যবহার, ভবনের অগ্নিপ্রতিরক্ষা, ফায়ার ড্রিল, ভবনমালিকের সচেতনতা ও দায়িত্বশীল আচরণ এবং নগর সেবা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে নিয়মিত তদারকি থাকলে এমন দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। এ ধরনের দুর্ঘটনা গাফিলতিজনিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা না করলে এবং এসব ক্ষেত্রে যেসব ব্যক্তি ও কর্র্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালনে গাফিলতি, উদাসীনতা, দায়িত্বহীন ও অন্যায় আচরণ করেছেন তাদের যথাযথ আইনের আওতায় না আনলে এর পুনরাবৃত্তি হতেই থাকবে।

বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে কার্যকর কোনো অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনা ছিল না জানিয়ে দুর্ঘটনার আগে ফায়ার সার্ভিস তিনবার চিঠি দিয়েছে। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ বলেও কর্র্তৃপক্ষকে অবহিত করেছে। কিন্তু ভবনমালিক ও ভবনের ব্যবহারকারীরা এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করলেও ফায়ার সার্ভিস তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।

ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেশিরভাগ ভবন ও বাসাবাড়িতে অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া হয় না এবং এ কারণেই এ ধরনের দুর্ঘটনার সময় ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যায় না। যেকোনো ভবন বা বাসাবাড়িতে অগ্নিদুর্ঘটনা ঠেকানো ও এর ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে হলে ভবন নির্মাণ পর্যায় থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। আর এ বিষয়টি দেখভালের জন্য প্রয়োজন নিয়মিত ও দক্ষ মনিটরিং। অথচ যেমন তদারকিও নেই, তেমনি অনিয়মকারী ও তাদের প্রশ্রয়দাতাদেরও সাজার আওতায় আনা হচ্ছে না। যা অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।’

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সাবেক পরিচালক এবং অগ্নিনিরাপত্তা সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান বিএম ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর এ কে এম শাকিল নওয়াজ বলেন, ‘আগুন লাগলে সেটি ছড়িয়ে পড়া অনেকাংশেই ঠেকানো সম্ভব যদি আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কোনো ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে ভবনে দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। অগ্নিনিরাপত্তায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাটাই সবচেয়ে জরুরি। বাড়ি নির্মাণের সময় মূল নকশার সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে হবে এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সক্রিয় ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে আগুন ধরে গেলে সেটির ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে নানা ধরনের পদক্ষেপ।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার কেএন রায় নিয়তি জানিয়েছেন, বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অবৈধ ও অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ হোটেল ও রেস্তোরাঁয় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। গত সোমবার রাত পর্যন্ত ৪৫৫টি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণভাবে গ্যাস সিলিন্ডার রাখা দোকান ১০৪টি এবং ৩টি কেমিক্যাল গোডাউনেও অভিযান চালানো হয়। এর মধ্যে রমনায় ১১০টি, লালবাগে ৩৫টি, ওয়ারীতে ৪১টি, মতিঝিলে ১০৮টি, তেজগাঁওয়ে ৭৪টি, মিরপুরে ৪২টি, গুলশানে ৩০টি এবং উত্তরায় ১২২টি অভিযান পরিচালনা করা হয়।

পোস্টটি শেয়ার করুন