ট্রিবিউন ডেস্ক: মো. শহিদুল ইসলাম। বাড়ি খুলনার খোকসা উপজেলায়। নিজ জমির দখল নিয়ে প্রতিবেশী মোকাদ্দেস হোসেনের সঙ্গে দীর্ঘদিন বিরোধ চলছিল। মোকাদ্দেসের অভিযোগ জোরপূর্বক তার জমি দখল করে রেখেছেন শহিদুল। এ নিয়ে মোকাদ্দেস খোকসা সহকারী জজ আদালতে মামলা করলে আদালত তার পক্ষে রায় দেন। জেলা জজ আদালতের রায়ও যায় মোকাদ্দেসের পক্ষে।। ২০১৫ সালে বিচারিক আদালতের রায় বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন শহিদুল। দীর্ঘ শুনানি শেষে চলতি মাসের ১৫ তারিখে হাইকোর্টের একক বেঞ্চ বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে রায় দেন। তবে রায়ের দিন আদালতে উপস্থিত থেকেও কিছুই বুঝতে পারেনি শহিদুল। ইংরেজিতে আদেশ দেয়ায় আদালতে কী আদেশ এসেছে তা বুঝতে আইনজীবীর কাছে যান তিনি।
পরে আইনজীবী আসাদুজ্জামান জানান, আদালত তার পক্ষে আদেশ দিয়েছেন। শুধু শহিদুল ইসলামের মামলাই নয় উচ্চ আদালতে বেশির ভাগ রায় বা আদেশ ইংরেজিতে প্রকাশ হয়। ইদানিং বাংলায় রায় বাড়লেও তা সংখ্যায় খুব বেশি নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, আদালতে ইংরেজিতে আবেদন করতে হবে বা ইংরেজিতে রায়, আদেশ বা রুল দিতে হবে- এমন কোনো বিধান নেই। এটা অবশ্যই যার যার ইচ্ছা। এখন অনেক রায় বাংলায় হচ্ছে। তবে আমাদের নজির এবং আইনগুলো ইংরেজিতে। অনেক আইন ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা করা হয়েছে। সবগুলো হতে একটু সময় লাগবে। তবে এ বিষয়ে আরও বেশি উদ্যোগ নিতে হবে।
উচ্চ আদালতে বাংলার ব্যবহার বেড়েছে জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, ইংরেজি ভাষায় রায় দিলে বিচারপ্রার্থীদের বুঝতে সমস্যা হয় এটা সত্য। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সুপ্রিম কোর্টে এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাংলা চালু হয়েছে। অনেকে বিচারপতিই বাংলায় রায় দিচ্ছেন। বাংলায় রায় দেয়ার প্রবণতা আগের তুলনায় বাড়ছে। তবে বাংলা ভাষার ওপর আরও জোর দেয়া উচিত বলে মনে করি। কারণ এটা আমাদের মাতৃভাষা। আর মাঠ প্রশাসনের ইংরেজি ভাষা বুঝতে সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হয় না।
এ বিষয়ে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক মানবজমিনকে বলেন, আসলে বাংলা ভাষায় রায় দেয়া চাইলেই সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অনেক বেঞ্চ অফিসাররা বাংলা লিখতে পারেন না। বাংলার প্রতিশব্দ খুঁজে বের করা বেশ কষ্টসাধ্য। তবে ১০ বছর আগের তুলনায় এখন উচ্চ আদালতে বাংলার ব্যবহার অনেক বেড়েছে। সামনে আরও বাড়বে বলে আশা করি।
-মানব জমিন
প্রকাশক ও সম্পাদক: মু. আতিকুর রহমান সুমন
Copyright © 2025 চাঁপাই ট্রিবিউন. All rights reserved.