শহীদ হবিবুর রহমানের কন্যা রাজশাহীতে

Chapai Chapai

Tribune

প্রকাশিত: ৮:৪৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৭, ২০২৪

মো. সফিকুল ইসলাম :রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শহীদ শিক্ষক অধ্যাপক মুহম্মদ হবিবুর রহমানের আমেরিকা প্রবাসী কন্যা মোনালিসা হাসান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সফর করে গেছেন। তিনি গত ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, দিনভর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন।

মোনালিসা যতবারই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন ততবারই পিতাকে খুঁজে ফিরেন—‘আহা পিতা যদি ফিরে আসতেন’। শহীদ হবিবুর রহমানের কোনো কবরের চিহ্ন নেই যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন মোনালিসা।

অধ্যাপক হবিবুর রহমানের বাসা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম আবাসিক এলাকায়, বাসা নং- প-১৯/বি। সেই বাসা থেকে ১৯৭১ সালে ১৫ এপ্রিল বিকেলে পাকসেনার একটি দল অধ্যাপক হবিবুর রহমানকে সামরিক জীপে করে নিয়ে যায়। তাঁর স্ত্রী ওয়াহিদা রহমান ছুটে গিয়েছিলেন উপাচার্য সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেনের কাছে। খারাপ আচরণের শিকার হয়ে ওয়াহিদা রহমান বাসায় ফিরে আসেন।

লেখক এর সাথে

পাকসেনাদের নিপীড়ন-অত্যাচার বৃদ্ধি পাওয়ায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সুখরঞ্জন সমাদ্দারকে ধরে নিয়ে গেলে অধ্যাপক হবিবুর রহমান প্রকাশ্যে তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরই জেরে পাকসেনারা তাঁকে নিজ বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় ‘সৈয়দ ইতরাৎ হোসেন জুবেরী ভবন’-এ। সেই থেকে অধ্যাপক হবিবুর রহমান নিখোঁজ—তিনি আর ফিরে আসেনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. সৈয়দ শামসুজ্জোহা হল ও জুবেরী ভবনে পাকসেনারা তাদের সেনানিবাস স্থাপন করে হত্যা-নির্যাতন চালায় রণাঙ্গনের পুরো নয় মাস। ‘জোহা হল বধ্যভূমি’ দেশের সর্ববৃহৎ বধ্যভূমি। পাকসেনারা তাদের এদেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় রাজশাহী অঞ্চলের মুক্তিকামী বাঙালিকে ধরে এনে জোহা হলে নির্যাতন করতো, পরে হত্যা করে লাশ পুঁতে রাখতো হলের পূর্ব দিকে, কিংবা ফেলে রাখতো। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে অন্তত দশ হাজার মুক্তিকামী বাঙালিকে হত্যা করছে পাকসেনারা।

মোনালিসা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানের সময়
তাঁর স্মৃতিবেদনার সেই ‘প-১৯/বি’ নং বাসায় যান—শৈশব মনে করার চেষ্টা করেন —নিরবে চোখের জল ফেলেন। পিতার কর্মস্থল গণিত বিভাগ ও পিতার নামে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বৃহৎ ‘শহীদ হবিবুর রহমান হল’, জোহা হল বধ্যভূমিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থান-স্থাপনা পরিদর্শন করেন।

মুহাম্মদ হবিবুর রহমান দুই ছেলে ও চার মেয়ের জনক। বড় ছেলে প্রফেসর খায়রুল আনাম বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন। ছোট ছেলে আনিসুর রহমান বিদেশে থাকেন। মেয়ে রোকসানা রহমান, শারমিন রহমান, নাসরিন রহমান ও মোনালিসা রহমান (বিবাহের পর থেকে অবশ্য তিনি ‘মোনালিসা হাসান’ লিখেন)। তাঁরা সবাই প্রবাসী।

মোনালিসা হাসান, আপনার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনাকে পেয়ে আমরা আপ্লূত। আপনার মহান পিতা শহীদ হবিবুর রহমানকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতি পরম শ্রদ্ধায় স্মরণে রাখে নিত্যই।

লেখক : উপ-রেজিস্ট্রার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

পোস্টটি শেয়ার করুন