সরকার গঠনের আগেই পাকিস্তানের বিতর্কিত সাধারণ নির্বাচনকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন

Chapai Chapai

Tribune

প্রকাশিত: ৯:৪৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৪

ট্রিবিউন ডেস্ক: বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক সতর্কতা ছিলো ভোটের কয়েক মাস আগে থেকেই। এমনকি নির্বাচনকেন্দ্রিক আলাদা ভিসা নীতির ঘোষণাও দেয়, মার্কিন সরকার। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের ইতিবাচক মন্তব্যের পরও ফল ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্র জানায়, বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি।

অথচ ব্যতিক্রম ভূমিকা নিতে দেখা গেছে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে। পিটিআইকে দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়া, নির্বাচন পূর্ববর্তী ও নির্বাচনকালীন ব্যাপক অনিয়ম, সংঘাত, সহিংসতা এমনকি ইন্টারনেট ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়ার পর তিনদিনেও ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি পাকিস্তানে। এতকিছুর পরও পাকিস্তানের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে মাথাব্যাথা নেই মার্কিন মোড়লদের। এরই মধ্যে পাকিস্তানের নতুন সরকার যারাই গঠন করুক, তাদের সঙ্গেই কাজ করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের ১৬তম সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঘোষণা করা যায়নি। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যোগাযোগে গোলযোগের কারণে ভোট গণনায় দেরি হচ্ছে। পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকা ডন জানিয়েছে, দেশজুড়ে মুঠোফোন সেবা সাময়িক স্থগিত রাখা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অনেকটাই বেড়ে গেছে। এতে মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। অবনতি ঘটছে দেশের নিরাপত্তা পরিবেশের। এ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার ঝুঁকির বিপরীতে ‘সুরক্ষাকবচ’ হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন ছিলো।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার অবশ্য পাকিস্তানের নির্বাচনী প্রক্রিয়া চলার সময়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, জোট গঠন এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের উপর অযাচিত বিধিনিষেধ আরোপের সমালোচনা করেছেন। তিনি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ হিসাবে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের উপর আক্রমণ, ইন্টারনেট-টেলিযোগাযোগ সেবার উপর নিষেধাজ্ঞাকে উল্লেখ করেছেন।

একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সংস্থাটি ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অভাব’ এর জন্য ‘কিছু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অক্ষমতা’ এবং সমাবেশের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের উপর বিধিনিষেধকে দায়ী করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র এক বিবৃতিতে বলেছে, ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে পাকিস্তানের নির্বাচনে ভোট দিয়ে লাখ লাখ পাকিস্তানি নাগরিক তাদের কণ্ঠস্বরের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। রেকর্ড সংখ্যক পাকিস্তানি নারী, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সদস্য এবং যুবকরা নিবন্ধিত হয়েছে। আমরা পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানগুলিকে রক্ষা ও সমুন্নত রাখার জন্য পাকিস্তানি নির্বাচনী কর্মী, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের প্রশংসা করি। আমরা এখন সময়োপযোগী, সম্পূর্ণ ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছি যা পাকিস্তানি জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাবে।

ম্যাথিউ মিলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অভিন্ন স্বার্থকে এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে পাকিস্তানের পরবর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। আমরা বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে পাকিস্তানের অর্থনীতিকে সমর্থন করে আমাদের অংশীদারিত্ব জোরদারের প্রত্যাশা করছি। আমরা পাকিস্তানকে তার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা, মার্কিন-পাকিস্তান গ্রিন অ্যালায়েন্স ফ্রেমওয়ার্কের মাধ্যমে জড়িত হওয়া, মানুষে মানুষে সম্পর্ক প্রশস্ত করা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ মানবাধিকারের প্রচারে সমর্থন অব্যাহত রাখবো। আমরা আমাদের নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করতে এবং সুরক্ষা ও নিরাপত্তার পরিবেশ তৈরি করতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে পাকিস্তানি নাগরিকরা শান্তি, গণতন্ত্র ও অগ্রগতি পায়।

 

__আরটিভি

পোস্টটি শেয়ার করুন