বাঙালি জাতির পিতা ও বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণা; ‘বঙ্গবন্ধু’ থেকে ‘বিশ্ববন্ধু’

Chapai Chapai

Tribune

প্রকাশিত: ৩:২৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৭, ২০২২

সম্পাদকীয়ঃ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি,বিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা, রাজনীতির কবি, বাংলাদেশের স্থপতি জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মদিন আজ শুক্রবার (১৭ মার্চ)।

বাঙ্গালি জাতির স্বতন্ত্র পরিচয়ে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতির পরিচয়ের সূত্রপাত হয়েছিলো বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল গোপালগঞ্জের নিভৃত গ্রাম টুঙ্গীপাড়ায় ১৯২০ সালের ৭ মার্চ। এদিন জন্ম নেওয়া শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দেন। মানুষের মুক্তির জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও বিশ্বনেতায় পরিণত হন।

জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমন সময় জন্ম গ্রহণ করেন যখন পরাধীন ভারতবর্ষের একটি ভূখণ্ডে। তিনি শৈশব থেকেই জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও নির্যাতন দেখেছেন। স্বৈরাচারী ইংরেজ সরকারের দমন নিপীড়ন ও তাদের গোলাম হয়ে থাকার পরিবেশ দেখে বড় হয়েছেন। মানুষের দুঃখ,কষ্ট ও বঞ্চিত হতে দেখে তাদের মুক্তির সংগ্রামে ছাত্র জীবন থেকেই তিনি নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন।

শেখ মুজিবুর রহমানের পিতা ছিলেন শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়রা খাতুন। দুই ভাই ও চারবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান। ৭ বছর বয়সে তিনি পার্শ্ববর্তী গিমাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি মাদারীপুর ইসলামিয়া হাইস্কুল, গোপালগঞ্জ সরকারি পাইলট স্কুল ও পরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে লেখাপড়া করেন।

তিনি ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতার বিখ্যাত ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন ১৯৪২ সালে। ভর্তি হয়ে কলেজের বেকার হোস্টেলে উঠেন। ছাত্রদের অধিকার আন্দোলন ও বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ে নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। এই সময়ে তিনি হোসেন সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিমের মতো বড় রাজনৈতিক নেতাদের সংস্পর্শে আসেন। ছাত্রদের মাঝে তুমুল জনপ্রিয় নেতা শেখ মুজিব কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৬ সালে তিনি বিএ পাশ করেন। সেই বছর ভারতবর্ষের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় শান্তি স্থাপনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি।

১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ যখন দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ হলো তখনই তিনি বলেছিলেন এই মানচিত্র আমাদের জন্য নয়।
দেশভাগের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন শেখ মুজিব। এই অপরাধে তাঁর ছাত্রত্ব বাতিল করেন তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ভিত্তিহীন দ্বিজাতিতত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠা হওয়া পাকিস্তানের তখনকার রাষ্ট্রপ্রধান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ব বাংলা সফরে এসে উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণার পর পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র সমাজসহ বাঙালি জাতি প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। মাতৃভাষার মান রক্ষায় আন্দোলন শুরু হয়। শেখ মুজিবুর রহমান এই ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে তাঁকে কারাগারে যেতে হয়। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে বলিষ্ঠ ভূমিকা ও নেতৃত্বের দেন। এজন্য তাঁকে দুই বার ফাঁসির কাষ্ঠের মুখোমুখি হতে হয়েছে। কারাগারে যেতে হয়েছে ১৮ বার। বাংলার মানুষের জন্য সংগ্রাম করে যাওয়া শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ সালে ছাত্র জনতার পক্ষ উপাধি পেলেন ‘বঙ্গবন্ধু’।

দেশভাগের পর থেক ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪ এর, ৬২ এর শিক্ষা আআন্দোলন, ৬৬ র ছয় দফা,৬৯ র গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচনে ঐতিহাসিক নিরংকুশ বিজয়সহ ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ সবটাতেই ছিলেন একজন অসীম সাহসী নেতৃত্ব।

সময়ের সাথে সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ সময়ের আন্দোলন সংগ্রামের সফলতার পরিপূর্ণতায় ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ পূর্ববাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে সারাদেশ থেকে উপস্থিত লাখ লাখ জনতার মহাসমাবেশে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিলেন;

‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, তোমাদের যার কাছে যা কিছু আছে তাই নিয়েই প্রস্তুত থাক, আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো।’

এই নির্দেশের পর মুক্তিকামী বাঙালি জাতি সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। পাকিস্তানিরা অবস্থা বেগতিক দেখে ২৫ মার্চ রাতে বাঙালি জাতির উপর গণহত্যা চালায়। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারছিলেন তিনি গ্রেফতার হতে পারেন তাই ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেফতারের আগেই ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। পাকিস্তানিরা তাঁকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যায়।

দীর্ঘ নয়মাস মুক্তিযুদ্ধের পর ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বিজয়ের পর কারাগার থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানিরা। মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি পা রাখেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ কে নতুন করে গড়ে তুলতে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন বঙ্গবন্ধু।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক চক্র। স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিনবছরের মাথায় ইতিহাসের কলঙ্কিত একটি দিনে বাঙালি জাতি হারিয়ে ফেলে তাদের পিতাকে। পথহারা বাঙালি জাতি দেশ বিরোধী,ক্ষমতা পিপাসু ও সুবিধাভোগীদের জিম্মি হয়ে পড়ে।

জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাঙালি জাতির নেতা না, সময়ের সাথে সাথে তিনি হয়েছেন বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের নেতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সমকালীন বিশ্বের মুক্তিকামী নিপীড়িত জনগণের নেতা। সারাবিশ্বে তিনি ছিলেন জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক যিনি একটি স্বাধীন দেশের প্রতিষ্ঠাতা। জাতিসংঘ তাঁকে উপাধি দিয়েছেন ‘বিশ্ববন্ধু’। ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর সেই ৭ মার্চের ভাষণ কে দিয়েছে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি।

    বঙ্গবন্ধু কে অস্বীকার করলে বাংলাদেশকে অস্বীকার করা হবে। বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু।
    মহান এই বিশ্বনেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, অবিসংবাদিত নেতা জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মদিনে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা…।

লেখক:
মুঃ আতিকুর রহমান সুমন
সম্পাদক
চাঁপাই ট্রিবিউন (www.chapaitribune.com)

পোস্টটি শেয়ার করুন