জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি: সরকারের কি স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত! না বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি দায়ী??

Chapai Chapai

Tribune

প্রকাশিত: ১:২৩ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৮, ২০২২

সম্পাদকীয়: করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা টালমাটাল বিশেষ করে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই বিশ্ব জ্বালানি তেল সংকটে পড়ে আছে। বাংলাদেশের সরকারও বাধ্য হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা। অনেক সমালোচনা ও আলোচনায় থাকা তেলের দাম বৃদ্ধি। এজন্য কি সরকার দায়ী?? এটা কতটা যৌক্তিক যে, যারা বলেন সরকার ব্যর্থ? একটু পরিসংখ্যান নিয়ে কথা বললেই উত্তর পেয়ে যাবেন। ডিজিটাল যুগে একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ একটা মানুষও গ্রামে বসে থেকেই সারাবিশ্বের খবর দেখে, বিরোধী দলের বিরোধিতা এজন্যই হয়তো শক্তিশালী করতে পারে না। কারণ জনগণকে ভুল মেসেজ দেওয়ার কোন অপশন নেই বর্তমান যুগে। যদিও সোসাল মিডিয়ায় প্রচুর প্রোপাগাণ্ডা ছড়াতে এখনও এগিয়ে তারা।
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যতটা সমালোচনা করে জনগণকে রাস্তায় নামার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তা কতটুকু যৌক্তিক? তবে এই ইস্যুতেও তারা ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ দেশের জনগণ দেশ বিদেশের সবার খবর এখন জানে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিতে অবশ্যই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। বর্তমান বিশ্বে যে পরিস্থিতি তাতে সরকারকে সব দোষ চাপিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই।

জ্বালানি তেলের সংকট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত নিজেদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ প্রতিহত করে টিকে আছে। কিছু বিষয় তুলে ধরলাম; বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের সংকটে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় তা পরিষ্কার হবে।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর এখনো ভারতের তুলনায় অনেক কম টাকায় পেট্রোল-ডিজেলসহ জ্বালানি কিনছে বাংলাদেশের জনগণ। ভারতে প্রতিদিন রাত ১২টার পরে আন্তর্জাতিক ক্রুড অয়েলের দাম হিসাবে সমন্বয় করা হয় পেট্রো পণ্যের দাম।

ভারতে বাংলাদেশী টাকার বর্তমান বিনিময় মূল্য কমতে কমতে ১০০ রুপির বিপরীতে মিলছে মাত্র ৭৪ টাকা। সেই হিসাবে হিসাব বলছে একজন বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতের মুম্বাইতে বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লিটার পেট্রোল কিনতে সর্বোচ্চ খরচ হবে ১৫০ টাকা ৪৭ পয়সা।

সর্বনিন্ম দিল্লিতে এক লিটার পেট্রোল কিনতে খরচ হবে ১৩০ টাকা ৭০পয়সা এবং কলকাতায় বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লিটার পেট্রোল কিনতে খরচ হবে ১৪৩ টাকা ২৮ পয়সা। যেখানে শুক্রবার দাম বৃদ্ধির পরে বাংলাদেশে ১ লিটার পেট্রোলের দাম দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৩০টাকায়।

একইভাবে একজন বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতে এক লিটার ডিজেল কিনতে বাংলাদেশি মুদ্রায় গুনতে হবে ১৩১ টাকা ৪৬ পয়সা। সর্বনিম্ন গুনতে হবে ১২১ টাকা ১২ পয়সা। এবং কলকাতায় বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লিটার ডিজেল কিনতে লাগবে ১২৫ টাকা ৩৫ পয়সা। যেখানে দাম বৃদ্ধির পরে বাংলাদেশে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম দাঁড়িয়েছে মাত্র ১১৪ টাকায়।

এর আগে গেলো বছরের অক্টোবর নভেম্বরে পেট্রোলের জন্য সর্বোচ্চ ১২২.৩২ রুপি প্রতি লিটারে এবং ডিজেলের জন্য ১১৩.২১ রুপি করে দিয়েছে ভারতীয়রা। সম্প্রতি পেট্রোপণ্যের ওপর থেকে সরকারের ট্যাক্স ছাড় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোপণ্যের দাম কমায় নতুন দাম সমন্বয় করেছে ভারত।

বাংলাদেশী মুদ্রার হিসেবে গেল বছরের অক্টোবর নভেম্বর মাসে পেট্রোলের জন্য ভারতীয়রা এখনো পর্যন্ত সবথেকে বেশি দাম গুনেছে ১৬৫.২৯ টাকা এবং ডিজেলের ক্ষেত্রে গুনেছে ১৫২.৯৯ টাকা।

ব্যাপক দাম বৃদ্ধির পরে ভারতে কিছুটা দাম কমায় আপাতত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে দেশটির সাধারণ মানুষ। গ্রাহকরা বলছে এই দাম অনেকটাই তাদের গা সওয়া হয়ে গেছে। ভারতে পেট্রোপণ্যের ওপর ট্যাক্স ছাড় দেয়ার পরেও বর্তমানে মূল দামের ওপর প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি ট্যাক্স আদায় করে থাকে ভারত সরকার।

এদিকে বাংলাদেশের তুলনায় পেট্রোল-ডিজেলে উচ্চমূল্য দিলেও ভারতীয়রা শতভাগ পেট্রোল বা ডিজেল পান না। আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে তেল শোধনাগারেই তেলের সঙ্গে মেশানো হয় ২০ শতাংশ ইথানল। গেলো বছর ১০ শতাংশ ইথানল ব্লেন্ডিং করে ভারত সরকার প্রায় ৪১ হাজার কোটি রুপির বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে।

বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে একটা উন্নয়নশীল দেশের সরকার যতই দক্ষ হোক, এরকম সিচুয়েশনে কিছু বাজে পরিস্থিতি তৈরি হবেই। বিশ্বের জ্বালানি তেল সংকটে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমাধান হবে। বৈশ্বিক এই বিরূপ পরিস্থিতিতে সকল রাজনৈতিক দল, সাধারণ জনতা ও সরকারের উচিত একসাথে সংকট উত্তরণে কাজ করা।

_________
মু: আতিকুর রহমান সুমন
সম্পাদক
চাঁপাই ট্রিবিউন।

পোস্টটি শেয়ার করুন