‘দ্বাদশ সংসদ নিবাচন অনেক বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছে’

Chapai Chapai

Tribune

প্রকাশিত: ৪:৪৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৮, ২০২৪

ট্রিবিউন ডেস্ক: দ্বাদশ সংসদ নিবাচন অনেক বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছে বলে মত দিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। এবারের সংসদ অনেক প্রাণবন্ত হবে এবং এই নির্বাচন উদাহরণ হয়ে থাকবে উল্লেখ করে তারা বলেছেন, এর ফলে ভবিষ্যতে বর্জনের ধারা থেকে দলগুলো বের হয়ে আসবে।

শনিবার রাজধানীর ঢাকা গ্যালারিতে ‘দ্বাদশ সংসদের নতুনত্ব ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন তারা। দেশের সম্পাদকদের শীর্ষ সংগঠন এডিটরস গিল্ড ওই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

বক্তারা বলেন, নির্বাচনে কোনো দল অংশ নিলো কি-না তা বড় বিষয় নয়, বরং ভোটাররা অংশ নিয়েছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নির্বাচন যে পদ্ধতিতে হয়েছে তার সুফল জাতি আগামীতে পাবে বলেও মনে করেন তারা।

বক্তারা বলেন, যারা নির্বাচনে জয়ী হতে পারে না তারাই বর্জন করে নানা বাহানা তৈরি করে। আলোচকরা বলেন, বিদেশের সাথে যেসব চুক্তি হয় তা সংসদে আলোচনা হলে সাধারণ মানুষের কাছে বিষয়গুলো পরিষ্কার ধারণা পাবে। এছাড়া সমালোচনা করার জন্য সংসদে একটা শক্ত বিরোধী দল থাকারও প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন বক্তারা।

গোলটেবিল বৈঠকের সঞ্চালক এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু বলেন, দ্বাদশ সংসদ নিবাচন অনেক বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছে। বড় কোনো অভিযোগ ছাড়া নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে। আমরা আশা করি, শুধু নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাই নয় যেসব ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি সেগুলো এবার সমাধান করা যাবে।

একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা কিংবা না করা প্রত্যেকটা দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। বিএনপি যেটা করেছে, সেটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি বিএনপি এতে বাধা দিয়েছে, লিফলেট বিতরণ করেছে-এটা অপরাধ। বিএনপি নির্বাচনে না এলেও, বাধা দিলেও ৪২ শতাংশ ভোট পড়েছে। এটা নির্বাচন কমিশনের সফলতা।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বলা হচ্ছে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি বলা হচ্ছে। কোনো দল অংশ নিলো কি না তা বড় বিষয় নয়, বরং ভোটাররা অংশ নিয়েছে এটাই বড় বিষয়। যা ভোট পরেছে তা যথেষ্ট। নির্বাচন যে পদ্ধতিতে হয়েছে তার সুফল জাতি আগামীতে পাবে। যারা নির্বাচনে জয়ী হতে পারবে না তারাই বর্জন করে নানা টালবাহানা তৈরি করে। বরং এটা তাদের জন্য একটা বার্তা, যে বর্জন করলে দলেরই ক্ষতি। প্রশাসনের ভূমিকাও এবার যথেষ্ট নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। সরকারের প্রভাব যাতে না থাকে তার জন্য কঠোর অবস্থানে ছিলো সবাই।

তিনি বলেন, এবার সংসদ অনেক প্রাণবন্ত হবে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। এই নির্বাচন উদাহরণ হয়ে থাকবে। ভবিষ্যতে বর্জনের ধারা থেকে দলগুলো বেরিয়ে আসবে।

গাজীপুর-৫ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান বলেন, এবারের নির্বাচনে ফলাফল দেরিতে পেয়েছি কিন্তু তারপরও নির্বাচনের ব্যবস্থাপনা ভালো ছিলো। ফলাফলে কোনো অনিয়ম হয়নি। ১৬ দিন নিবার্চনী প্রচার অনেক কম হয়ে গেছে। স্বতন্ত্র প্রাথীর জন্য ১ শতাংশ ভোটের বিধানটি অনেক সময় বাধা তৈরি করে। বিএনপির বাধা দেয়াটা মানসিক প্রভাব পড়েছিলো। তারা অব্যাহত রেখেছিলো ভোট যাতে না হয় এবং তাদের ভোটাররা ভোট দেয় নাই। সব দল না আসলেও ভোটাররা যদি ভোট দিতে আসে সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিদেশের সাথে যেসব চুক্তি হয় তা সংসদে আলোচনা হলে সাধারন মানুষের কাছে বিষয়গুলো পরিষ্কার ধারণা পাবে।

দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের ইমেরিটাস সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, সমালোচনা করার জন্য সংসদে একটা বিরোধী দল থাকতে হবে। বাংলাদেশের সংসদের ইতিহাসে, আওয়ামী লীগ যেভাবে তার মন্ত্রীদের জবাবদিহির আওতায় এনেছে, সেদিক বিবেচনায় নিলে সংসদকে জবাবদিহিমূলক করতে আওয়ামী লীগের ভূমিকাই যথেষ্ট হবে।

এ ক্ষেত্রে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ কোনও বাধা হবে না বলেও মনে করেন তিনি।

নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা কী করেন সেটাও আমরা দেখতে পাবো। শুধু সমালোচনা করার জন্য একটি বিরোধী দল থাকতে হবে, এটা বৈধ কিছু না।

গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, স্বতন্ত্রের সংসদে ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। এবার। তাদের উচিত নিজেদের শক্তিশালী করে তোলা।

টিবিএনটুয়েন্টিফোরের প্রধান সম্পাদক নাজমুল আশরাফ বলেন, জাতীয় পার্টির অবস্থান এখন আরো দুর্বল হয়েছে। বিরোধী দলের যে শক্তিটা আছে তা সরকারি দলের সম্প্রসারণ। যে ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নিবার্চনে জয়ী হয়েছেন তারাই মূল প্রাথী ছিলেন। সরকারি দলের প্রশাসনের আর দলের যে ভূমিকা তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে।

সুশাসজনের নাগরিক-সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার বলেন এবারের নির্বাচন ছিলো একপক্ষীয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিলো না। যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তারা পরবতীতে আসন ভাগাভাগিতে অংশ নিয়েছেন। নির্বাচনে সহিংসতা হয়েছে সংখ্যালঘুদের উপর যা দুর্ভাগ্যজনক। রাজনৈতিক ক্ষেত্র ছোট করে এনে জবাবদিহিতা চাওয়াটা ঠিক নয়।

তিনি বলেন, এবারের সংসদের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সংসদে কোন বিরোধীদল নেই। আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রের মধ্যে কতটা ভারসাম্য করা যাবে সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ এবারের সংসদের।

বৈঠকে আরও অংশ নেন মানবাধিকার ও নারী অধিকার কর্মী রোকেয়া কবীর।

__একাত্তর টিভি

পোস্টটি শেয়ার করুন