এলাকায় চাঁদাবাজি ও মজুদদারি বন্ধে জনপ্রতিনিধিদের কঠোর হওয়ার নির্দেশ শেখ হাসিনার

Chapai Chapai

Tribune

প্রকাশিত: ৭:১০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪

ট্রিবিউন ডেস্ক: এলাকায় চাঁদাবাজি ও মজুদদারি বন্ধে জনপ্রতিনিধিদের কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি দলের সবাইকে মিলেমিশে কাজ করারও নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, সবার জন্য সংসদ নির্বাচন উন্মুক্ত না হলে দেশের গণতন্ত্র কেড়ে নেওয়া হতো।

গতকাল শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব জায়গায় চাঁদাবাজি ও মজুদদারি বন্ধ করতে হবে। আপনারা বিভিন্ন এলাকার প্রতিনিধি, এতে আপনাদেরও নজর দিতে হবে। একদিকে কৃষক যাতে প্রকৃত মূল্যটা পায় সেদিকে নজর দিতে হবে, অন্যদিকে এই অহেতুক চাঁদাবাজি ও মজুদদারির জন্য যাতে পণ্যের দাম না বাড়ে, সেটি দেখতে হবে। বিশেষ করে পরিবহনের ক্ষেত্রে বা পাইকারি বাজারে চাঁদাবাজি ও অবৈধ মজুদদারি বন্ধ করতে হবে।

বিশেষ বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। সভার শুরুতে বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। সভায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ, জাতীয় পরিষদ, মহানগর, জেলা, উপজেলা ও পৌরসভার নেতা, দলীয় ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য, সিটি ও পৌর মেয়র, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।

বিশেষ বর্ধিত সভাকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মিলনমেলা বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। একই সঙ্গে সেখানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, আগামী উপজেলা নির্বাচন এবং দ্রব্যমূল্য কমানোর বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।

নির্বাচন উন্মুক্ত না হলে দেশের গণতন্ত্র কেড়ে নেওয়া হতো:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংসদ নির্বাচন সবার জন্য উন্মুক্ত না হলে শুধু নির্বাচনই কলঙ্কিত হতো না, দেশের গণতন্ত্রও কেড়ে নেওয়া হতো। জাতীয় নির্বাচন না হলে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মর্যাদা নষ্ট হয়ে যেত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা ও দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার কারণ বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেছেন।

দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ‘কৌশলের’ কারণে দলের ভেতর যে দ্বন্দ্ব-বিভেদ তৈরি হয়েছে, তা কমানোর জন্যই মূলত বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। এ জন্য গতকালের বৈঠকে দলের শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সব স্তরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। দলের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরাও বৈঠকে অংশ নেন।

জানা যায়, সাধারণত জাতীয় নির্বাচনের আগে এ ধরনের বিশেষ বর্ধিত সভা হয়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত আগস্টেও এমন সভা হয়েছে। তবে এত অল্প সময়ের ব্যবধানে এর আগে বিশেষ বর্ধিত সভা হওয়ার নজির নেই।

সভায় শেখ হাসিনা বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে না হয়, সে জন্য চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ছিল। নির্বাচন যাতে না হয়, অর্থাৎ নির্বাচন হলে বাংলাদেশের মানুষের যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে, সেটি অনেকের সহ্য হয়নি, তাই এমন একটি চক্রান্ত করা শুরু করেছিল। এননির্বাচ‌নে না এসে নির্বাচন বানচাল করার জন্য জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসংযোগ শুরু করল। কারণ তারা জানত, জনগণের জন্য কাজ করে আওয়ামী লীগ জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। আর নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবে। এ জন্যই তারা নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করেছে। এই কাজে উৎসাহ জুগিয়েছিল তাদের কিছু প্রভু।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলন করে জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার তাদের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে। আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করেছি। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। বারবার নির্বাচন নিয়ে চক্রান্ত হয়েছে। সব চক্রান্ত মোকাবেলা করে আমরা ক্ষমতায় এসেছি। বিএনপি ২০১৪  সালে চেষ্টা করেছে, নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। ২০১৮ সালে এসেও আবার পরাজয় জেনে সরে গেছে। নির্বাচন যেন না হয়, সে অপচেষ্টা করেছে। এবারও বানচাল করার চেষ্টা করেছে। এখনো লম্ফঝম্প করছে। কিন্তু কোনো লাভ হবে না। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ কেউ যাতে অবহেলিত না থাকে, সে অনুযায়ী আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি এবং বাস্তবায়ন করেছি। জনগণের আস্থা, বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। জনগণই আমাদের একমাত্র শক্তি। জনগণের সংগঠন যদি বাংলাদেশে একটি থাকে, সেটি আওয়ামী লীগ।’ এ সময় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। নিজেদের মধ্যে কোনো সংঘাত যেন না হয় এবং একে অন্যের দোষ না খুঁজতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানান তি।

শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে নির্বাচন হয়েছে, সেটা এখনো তাদের বিরোধীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এমনকি নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় খুনাখুনি হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচনটা অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। জনপ্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীসহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেছে।

নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন নিয়ে তিনি বলেন, ‘৮১টি সংস্কার প্রস্তাব কার্যকর করে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করে দিয়েছি। নির্বাচন কমিশন যাতে নিরপেক্ষ কাজ করতে পারে, সে ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এই সাহস আওয়ামী লীগেরই আছে, যার কারণে এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে।’

আমি নিষেধাজ্ঞার রীতিনীতি জানি:

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভোটার যেন না আসে, নির্বাচনটা যাতে অবাধ না হয়, নির্বাচনই যেন হতে না পারে, সেই চেষ্টা ছিল; যাতে নির্বাচন হওয়ার পরে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় যে এই নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হয়নি। কাজেই নিষেধাজ্ঞা দাও, ওইটা দাও। আমাদের যখন বলেছিল নিষেধাজ্ঞা দেবে, তখন আমিও বলেছিলাম, দরকার হলে আমরাও নিষেধাজ্ঞা দেব, আমরাও দিতে পারি। আমি নিষেধাজ্ঞার রীতিনীতি জানি বলেই বলেছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘এত কথার মধ্যে আমাদের দেশটা যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখে এবারের নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছি। কারণ প্রতিপক্ষ থাকুক, নির্বাচনে প্রতিযোগিতা হোক, ভোটার আসবে, নিজেদের পছন্দমতো ভোট দেবে, যাকে খুশি তাকে দেবে, সেই অধিকারটুকু জনগণ পাক। সেইভাবে নির্বাচন করেছি বলেই আজকে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারছে না। অনেকেই বলে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারছে না। এই কথাটা আমাদের নেতাকর্মীদের মাথায় রাখতে হবে, মনে রাখতে হবে।’

পোস্টটি শেয়ার করুন