স্বাধীন বিচার বিভাগ ও শক্তিশালী সংসদ দেশকে এগিয়ে নিতে পারে: প্রধানমন্ত্রী

Chapai Chapai

Tribune

প্রকাশিত: ১১:৫৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪

ট্রিবিউন ডেস্ক:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, স্বাধীন বিচার বিভাগ, শক্তিশালী সংসদ ও প্রশাসন একটি দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে পারে।

তিনি বলেন,‘ক্ষমতা গ্রহণের পর আমরা বিচার বিভাগকে প্রশাসন থেকে আলাদা করে সম্পূর্ণ স্বাধীন করেছি, যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লক্ষ্য ছিল।’

শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন সাউথ এশিয়ান কনস্টিটিউশনাল কোর্টস ইন দ্য টুয়েন্টি-ফার্স্ট সেঞ্চুরি: লেসন্স ফ্রম বাংলাদেশ অ্যান্ড ইন্ডিয়া’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

উচ্চ আদালতের রায়ে সামরিক শাসন এবং সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখলকে অবৈধ হিসেবে রায় দেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর যখন এই রায় এলো— সেই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আবার গণতন্ত্রকে সুসংহত করি। আমাদের সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদ যেখানে বলা আছে যে ‘এই প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ’, সেখানে আরেকটি অনুচ্ছেদ আমরা যুক্ত করে এই উচ্চ আদালতের রায় অনুসারেই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী যে অপরাধী এবং সেটা যে শাস্তিযোগ্য অপরাধ, সেটা আমরা সংযুক্ত করি। এর মাধ্যমে জনগণের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত করা হয়েছে।’’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আমরা আইন পাস করেছি। এই নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রীর দফেতরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। তাকে আমরা সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি। বাজেটেও তাদের জন্য পৃথক বরাদ্দ দিয়েছি। এমনকি আগে বিচার বিভাগও আর্থিকভাবে নির্ভরশীল ছিল সরকারের ওপর। কিন্তু আমরা সরকারে আসার পর বিচার বিভাগকেও সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি। প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগ আলাদা করে দিয়ে সবক্ষেত্রেই তাদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি। আমরা এই বিষয়টা বিশ্বাস করি বলেই সেটা করতে পেরেছি, আওয়ামী লীগ সরকার করতে পেরেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যেমন আমরা নিশ্চিত করেছি, তেমনই নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচন কমিশনকেও স্বাধীন করে দিয়েছি। যাতে তারা আমাদের দেশের মানুষের অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে পারে।’

বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এবং ভারতের প্রধান বিচারপতি ড. ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড় বক্তৃতা করেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি এম এনায়তুর রহিম স্বাগত বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর দীর্ঘদিন ক্ষমতা জনগণের হাতে ছিল না, ক্যান্টনমেন্টেই বন্দি ছিল, এটাই হলো বাস্তবতা।’

তিনি বলেন, ‘আমি ধন্যবাদ জানাই সুপ্রিম কোর্টকে। কেননা, তারা যে আদেশটা দিয়েছিল, সেটাই আমাদের বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেয়। দুর্ভাগ্যক্রমে প্রায় ২১ বছর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষমতা মিলিটারি ডিক্টেটরদের হাতেই কুক্ষিগত ছিল।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘মুন সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে একটা মামলা ছিল। মার্শাল ল’ অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে ওই মালিকানাটা দেওয়া হয়েছিল অন্য কাউকে। যেটা নিয়ে আদালতে বিচার হয়। সেই বিচারের রায় দিতে গিয়েই সুপ্রিম কোর্ট এই মার্শাল ল’কে অবৈধ ঘোষণা করে। শুধু তাই নয়, সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল যে সম্পূর্ণভাবে অসাংবিধানিক এবং অসাংবিধানিক ও অনির্বাচিত কেউ সরকারে থাকতে পারে না— এটা যে অবৈধ সেই ঘোষণাই জারি হয়। সেটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ করে দেয়। তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার সুযোগ এনে দেয়। আর এর মাধ্যমেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার সুযোগ করে দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতায় এসে প্রথমেই রাজনীতিবিদদের গালি-গালাজ করেছে। এরপর নিজেরাই রাজনীতিবিদ হয়ে গেছে। উর্দি ছেড়ে রাজনীতিবিদ সেজে দল গঠন করে। প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়। অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করার জন্য সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এসে সেই অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করার প্রয়াস পেয়েছে। সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী এভাবেই তৈরি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ধন্যবাদ জানাই, আমাদের উচ্চ আদালতকে। কৃতজ্ঞতা জানাই সেসব জজ সাহেবদের, যারা রায় দিয়েছিলেন— সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল ও মার্শাল ল’ জারি অবৈধ। আপনারা যদি ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত হিসাব করেন, আজ দেশের যে আর্থসামাজিক উন্নতি হচ্ছে, সেটা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত এবং একটা স্থিতিশীল পরিবেশ আছে বলেই সম্ভব হয়েছে। আজকে এটা প্রমাণিত সত্য যে, মানুষের জীবনে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি, আর্থসামাজিক উন্নতি একমাত্র হতে পারে— যখন মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার সুযোগ হয়।’

‘দেশে একটি গণতান্ত্রিক ধারা বা পরিবেশ ছাড়া কখনও কোনও দেশের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নতি সম্ভব নয়,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভারতবাসী সেদিক থেকে সত্যিই সৌভাগ্যবান যে, তাদের দেশে ধারাবাহিক গণতন্ত্র চলেছে। হয়তো সরকার পরিবর্তন হয়েছে এবং বিরোধী মতালম্বীরাও রয়েছেন, গণতন্ত্র কখনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশে আমাদের জীবনে তো এসেছে অমানিশার অন্ধকার। পাকিস্তান আমলে যে স্বৈরশাসন বলবৎ ছিল, তা আবার ’৭৫ এর পরে টানা ২১ বছর স্বাধীন বাংলাদেশেও চলেছে। ’

তিনি মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানকেও এ সময় শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

এরইমধ্যে আমাদের ৯শ’ জনের বেশি বিচারক ভারতের ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ায় ভারত সরকার এবং ভারতের সুপ্রিম কোর্টকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ও সাংবিধানিক মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে বিভিন্ন কালজয়ী সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে। আমাদের দুই বন্ধুপ্রতীম দেশ একই আইনের ও আইনি দর্শনের উত্তরাধিকারী হওয়ায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তগুলো আমাদের উচ্চ আদালতে দৃষ্টান্ত বা রেফারেন্স হিসেবে গ্রহণ করার নজির আছে। তাছাড়া, কমন-ল কান্ট্রিজ হওয়ার সুবাদে যেকোনও দেশ যে কারও রায়কে প্রিসিডেন্স হিসেবে গ্রহণ করতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এ ধরনের কনফারেন্স আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের মিথষ্ক্রিয়া বাড়বে। আইনি জ্ঞান ও প্রজ্ঞার বিনিময়ের মাধ্যমে উভয় দেশের আদালত ও বিচার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সমৃদ্ধ হবেন। ফলে দু’দেশের বিচার বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় আরোহণ করবে।’

তিনি বলেন,‘আমি মনে করি, এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে অদূর ভবিষ্যতে ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার উদ্দেশ্যে, উন্নত বিচার প্রশাসন বিনির্মাণে, দু’দেশের মধ্যে একটি রোডম্যাপ তৈরি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে’।

খবর: বাসস

পোস্টটি শেয়ার করুন