

ট্রিবিউন ডেস্ক: সারা দেশে ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। ৩০ দিন সিয়াম সাধনার পর মুসলিম সম্প্রদায় বৃহস্পতিবার আনন্দ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করে। ঈদ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলীয় নেতাকর্মী, বিভিন্ন পেশাজীবী, বিচারক, বিদেশি কূটনীতিক এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্মর্তাসহ সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনের ক্রিডেনশিয়াল হলে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেওয়া শুভেচ্ছা বক্তব্যে সমাজের সচ্ছল ব্যক্তিদেরকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি সকালে জাতীয় ঈদগাহে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ছোট বোন শেখ রেহানা এবং পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।
তিনি বলেন, ‘যারা আজ গণভবনে এসেছেন, তাদের জন্য সীমাহীন আনন্দ। ঈদ সবার জীবনে বয়ে আনুক আনন্দ।’
রাজধানীর হাইকোর্ট চত্বরের জাতীয় ঈদগাহে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদুল ফিতরের নামাজের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্যরা, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা, সংসদ সদস্যরা, সিনিয়র রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিদেশি কূটনৈতিক এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এ জামাতে অংশ নেন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন ঈদের নামাজ পরিচালনা করেন।
নামাজ শেষে বাংলাদেশের শান্তি ও অগ্রগতি এবং জনগণ তথা মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল ৭টা থেকে পর্যায়ক্রমে ৫টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত প্রথম জামাতে ইমাম ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান। মুকাব্বির ছিলেন মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বারী মো. ইসহাক।
পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল পৌনে ১১টায়।
এতে ইমামতি করেন মিরপুর জামেয়া আরাবিয়া আশরাফিয়া ও এতিমখানার মুহতামিম মাওলানা সৈয়দ ওয়াহীদুজ্জামান। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. রুহুল আমিন।
নামাজ শেষে মোনাজাতে রমজানের রোজা, তারাবিহ, কোরআন তেলাওয়াত কবুলের জন্য আল্লাহর কাছে আর্তি জানানো হয়। গুনাহ মাফের জন্য অনেকেই চোখের জল ফেলে কাঁদতে থাকেন মোনাজাতে। আল্লাহর কাছে মৃত প্রিয়জনের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন। মোনাজাতে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা ছাড়াও ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য দোয়া করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।
ঈদ জামাত উপলক্ষে সকাল থেকেই বায়তুল মোকাররমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছিল। মসজিদের দক্ষিণ গেটের দুটি আর্চওয়ে দিয়ে প্রবেশ করেছেন মুসল্লিরা। গেটে পুলিশ এবং র্যাব সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে ছিল।
এদিকে দিনাজপুর গোর এ শহীদ ঈদগাহ ময়দানে এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তর ঈদের জামাত কয়েক লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় এ জামাতের ইমামতি করেন মাওলানা মো. শামসুল হক কাসেমী।
সকাল ৭টা থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিরা ঈদগাহ মাঠে আসতে থাকেন। নির্ধারিত নামাজের সময় সকাল ৯টার মধ্যেই ঈদগাহ মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়।
এই ময়দানে দিনাজপুরসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মুসল্লিরা নামাজে অংশ নিয়েছেন।
বরাবরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার ঐতিহাসিক ঈদগাহ ময়দানে দেশের অন্যতম বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অংশ নেন আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত কয়েক লাখ মুসল্লি।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফের ইমামতিতে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। মুসল্লিদের ভিড়ে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল ঈদগাহ ময়দান। ঈদের নামাজের মোনাজাতে মুসল্লিরা দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও দেশের মানুষের সুস্থতা কামনায় দোয়া করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সকাল সাড়ে ৮টায় শহরের কাজীপাড়ার জেলা ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন জেলা জামে মসজিদের খতিব হযরত মাওলানা সিবগাহতুল্লাহ নূর।
নামাজে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী র, আ, ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান এবং বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ নানা শ্রেণি-পেশার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অংশ নেন। পরে দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।