কলম্বো নিরাপত্তা কনক্লেভে পূর্ণ সদস্য পদ হচ্ছে বাংলাদেশ!

Chapai Chapai

Tribune

প্রকাশিত: ৮:২৫ পূর্বাহ্ণ, মে ১১, ২০২৪

ট্রিবিউন ডেস্ক: বৃহত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্ট্র্যাটেজিক বা কৌশলগত সহযোগিতা জোরদার করতে যে ‘কলম্বো সিকিওরিটি কনক্লেভ’ কাজ করছে, তাতে পূর্ণ সদস্য হিসেবে যোগদানের জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ এই গ্রুপের বৈঠকগুলোতে গত তিন-চার বছর ধরেই ‘অবজার্ভার’ বা পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়মিত অংশ নিচ্ছে, কিন্তু এখন তাদের যোগদানকে আরও ‘আপগ্রেড’ করতে উৎসুক কনক্লেভের অন্যতম প্রতিষ্ঠা দেশ ভারত।

‘কলম্বো সিকিওরিটি কনক্লেভ’-কে ওই অঞ্চলের ভূ-রাজনীতিতে একটি চীনবিরোধী জোট হিসেবেই দেখা হয়ে থাকে। ফলে বাংলাদেশের পক্ষে এই জোটের পূর্ণ সদস্য হিসেবে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা খুব সহজ হবে না বলেই অনেক পর্যবেক্ষকের ধারণা।

দিল্লিতে উচ্চ পর্যায়ের সরকারি সূত্রগুলো বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে, মরিশাসের রাজধানী পোর্ট লুইতে কলম্বো সিকিওরিটি কনক্লেভের সদ্যসমাপ্ত বৈঠকেই (৭-৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশকে ওই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মরিশাসে ওই বৈঠক ছিল সদস্য দেশগুলির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) পর্যায়ের। আর সেখানে ভারতের প্রতিনিধি তথা এনএসএ অজিত ডোভালই বাংলাদেশের কাছে এই প্রস্তাব তুলে ধরেন। তবে এই প্রস্তাবে পূর্ণ সম্মতি ছিল কনক্লেভের অপর দুই সদস্য দেশ শ্রীলঙ্কা ও মরিশাসেরও।

বাংলাদেশ যদি এই প্রস্তাবে রাজি হয়, তাহলে আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠেয় কনক্লেভের ষষ্ঠ এনএসএ পর্যায়ের বৈঠকেই তাদের পূর্ণ সদস্য পদে সিলমোহর পড়তে পারে। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র সেশেলস-কেও একই ধরনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। ফলে এখনকার দুই পর্যবেক্ষক দেশ একই সঙ্গে কনক্লেভের পূর্ণ সদস্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে, সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

‘কলম্বো সিকিওরিটি কনক্লেভ’ গঠনের ভাবনাটি ২০১১ সালে প্রথম অবতারণা করেছিলেন শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকশে (তিনি তখন ছিলেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী)। প্রথমে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ভারত— এই তিনটি দেশকে নিয়ে গঠিত হলেও পরে মরিশাসকেও এই নিরাপত্তা জোটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর কনক্লেভটি তার বর্তমান আকারে কাজ করতে শুরু করে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে।

এই কনক্লেভের মূল লক্ষ্য হলেঅ ‘মেরিটাইম নেইবার’ বা ‘সামুদ্রিক প্রতিবেশী’ দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে (ইন্ডিয়ান ওশান রিজিওন বা আইওআর) নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বৃদ্ধি করা।

বিগত চার বছরে এই কনক্লেভের আওতায় এনএসএ, ডেপুটি এনএসএ বা উপকূলরক্ষী বাহিনী পর্যায়ে একের পর এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ভারতের কোচি বা কলকাতা, শ্রীলঙ্কার কলম্বো, মালদ্বীপের রাজধানী মালে কিংবা মরিশাসের পোর্ট লুই-তে। এর প্রতিটিতেই বাংলাদেশ বা সেশেলস পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিল এবং তাদের প্রতিনিধিদের পাঠিয়েছিল।

তবে সম্প্রতি মালদ্বীপের নির্বাচনে ‘ভারতপন্থী’ সরকারের বিদায়ের পর যে নতুন ‘চীন-ঘেঁষা’ সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তাতে এই কনক্লেভের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কিছুটা পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

বস্তুত মরিশাসে কনক্লেভের সদ্যসমাপ্ত এনএসএ পর্যায়ের বৈঠকে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মরিশাসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা যোগ দিলেও মালদ্বীপের এনএসএ কিন্তু সেখানে ছিলেন না। বৈঠকের পর মরিশাসে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত কে নন্দিনী সিংলা যে টুইট (অধুনা ‘এক্স’) করেছেন, তাতে মালদ্বীপের যোগদানের কথা উল্লেখও করা হয়নি। ফলে এনএসএ নিজে না থাকলেও মালদ্বীপ অন্য কোনও প্রতিনিধিকে পাঠিয়েছিল কিনা, তা স্পষ্ট নয়।

তবে কনক্লেভের মঞ্চের যে ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করা হয়েছে, তাতে চার সদস্য ও দুই অবজার্ভার– মোট ছ’টি দেশের জাতীয় পতাকাই এক সারিতে দেখা গেছে। অন্যতম পর্যবেক্ষক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাও সেখানে ছিল।

লক্ষ্যণীয় হলো, মরিশাসে যখন এই কনক্লেভের বৈঠক চলছিল, ঠিক তখনই কিন্তু মালদ্বীপের নতুন ভাইস-প্রেসিডেন্ট হুসেইন মোহামেদ লতিফ চীনের কুনমিং সফর করছিলেন। চীনের ওই শহরে ‘চায়না-ইন্ডিয়ান ওশান রিজিওন ফোরাম অন ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন’ নামে একটি আলোচনায় তিনি যোগ দেন।

এদিকে দিল্লিতে ভারতের শীর্ষস্থানীয় সরকারি সূত্রগুলো আভাস দিয়েছে, মালদ্বীপে ক্ষমতার পালাবদলের পর ভারত এখন আরও বেশি করে চাইছে যে, বাংলাদেশ কলম্বো নিরাপত্তা কনক্লেভে পূর্ণ সদস্য হিসেবে যুক্ত হোক।

ভারতের একজন সিনিয়র কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, ‘ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বঙ্গোপসাগর কৌশলগতভাবে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য অংশ, আর সেখানে বাংলাদেশের গুরুত্ব অপরিসীম। ফলে কলম্বো নিরাপত্তা কনক্লেভ যে লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয়েছে, তা অর্জন করতে গেলে বাংলাদেশকে এই জোটে পুরোপুরি শামিল করাটা খুব জরুরি।’

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দিল্লি এখন যে নীতি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সাগর’– আর এই নামকরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে। ‘সাগরে’র পুরো কথাটা হলো ‘সিকিওরিটি অ্যান্ড গ্রোথ ফর অল ইন দ্য রিজিওন।’

এই রিজিওনে ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও সহযোগী, বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে ‘সাগর’ অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে বলেই মনে করছে দিল্লি। আর সে কারণেই কলম্বো নিরাপত্তা কনক্লেভে তাদের পূর্ণ সদস্য হিসেবে যোগ দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন