ঐতিহাসিক ছয়দফা দিবস উপলক্ষে ‘ইতিহাসের গতিধারায় বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা’ সংবাদচিত্র প্রদর্শনী


ট্রিবিউন ডেস্ক: ইতিহাসের পাতায় ‘বাঙালির মুক্তির সনদ’ হিসেবে স্বর্ণাক্ষরে লেখা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা ঘোষণার ৫৮ বছর পূর্তি হচ্ছে এবার। জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জনের গৌরবময় আন্দোলন-সংগ্রামে এই দিনটির তাৎপর্য অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। দিনটির স্মরণে তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও ছয় দফাপ্রণেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী জীবন ও স্বাধীন বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার রূপকার পাঁচবারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার অর্জন নিয়ে এই সংবাদচিত্র আয়োজন করা হয়েছে।
ইতিহাসের পাতা থেকে অতীতের সোনালি অধ্যায়ের কিছু বিশেষ ঘটনা ও মুহূর্তের ছবি আর বিবরণ নিয়ে এই প্রদর্শনী। এর উদ্দেশ্য মূলত ছয় দফার গুরুত্ব তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নতুন প্রজন্মের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ঐতিহাসিক বোধ জাগিয়ে রাখা।
একই সঙ্গে মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আবারও শ্রদ্ধা নিবেদন করা। প্রদর্শনীটিকে আকর্ষণীয় ও সমকালীন করে তোলার জন্য প্রচলিত পদ্ধতির সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগের করা হয়েছে। এর মাধ্যমে একটি ভিন্নমাত্রা দেওয়ার প্রয়াস রয়েছে।
প্রদর্শনী কক্ষে প্রবেশ করলেই দর্শকেরা তাঁদের দৃষ্টির সামনে দেখতে পাবেন বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফাসংবলিত ছবি আর তথ্যের সমন্বয়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ডিজিটাল বোর্ড।
প্রদর্শনীর দর্শনীয় নিদর্শনগুলো সাজানো হয়েছে নির্দিষ্ট ক্রমপর্যায়ে। প্রতিটি পর্যায়েই ছবির সঙ্গে উপস্থাপন করা হয়েছে প্রাসঙ্গিক তথ্য-উপাত্ত, যেন দর্শকেরা বিষয়টি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে পারেন।
এ পর্যায়ে প্রথমেই তুলে আনা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী জীবনের প্রথম পর্যায়ে মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে তাঁর অবদান। দীর্ঘ দেয়ালজুড়ে একের পর এক নানা মাপ ও আকৃতির বোর্ড, ফ্রেম, ডিজিটাল পর্দাসহ নানা উপায়ে দর্শনীয় বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয়েছে।
যেন দর্শকেরা এই ছবির সামনে দিয়ে যেতে যেতে একটি ঐতিহাসিক কালপর্ব অতিক্রমের অভিজ্ঞতা অনুভব করতে পারেন।
এই পর্বে দর্শকেরা দেখতে পাবেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী উপমহাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫ বছরের পথচলার একটি সচিত্র তথ্য বিবরণী। এর পরে রয়েছে রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মুহূর্ত, যেখানে তিনি বজ্রনির্ঘোষ কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
আরেকটু এগিয়ে গেলে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর কারাবাসের ঘটনার বয়ান। জীবনের ৪ হাজার ৮৮২ দিন তাঁর কেটেছে কারান্তরীণ। প্রতীকীভাবে কারাগারের দৃশ্যকল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এখানে।
এর পরে ১৮টি ফ্রেমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রমানের শৈশব থেকে অন্তিম পর্ব অবধি সংগ্রামী জীবনের সময়চিত্র।
৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পরে চিরকাক্সিক্ষত স্বাধীনতা অর্জিত হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পাকিস্তানে কারাবন্দী। ফলে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের আনন্দ যেন পূর্ণতা পায়নি নেতাকে ছাড়া। অবশেষে সব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন স্বদেশের মাটিতে পা রাখলেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি। সেদিন জাতি তাঁকে দিয়েছিল এক অবিস্মরণীয় প্রাণঢালা সংবর্ধনা। ইতিহাসের পাতা থেকে সেই দৃশ্যগুলোকেই ফিরিয়ে আনা হয়েছে এই পর্যায়ে।
প্রদর্শনী কক্ষের অভ্যন্তরভাগ ব্যবহার করা হয়েছে স্থাপনাকর্মের আঙ্গিকে। এর এক পাশে অর্থাৎ মূল প্রবেশপথ বরাবর সম্মুখ অংশে উপস্থাপন করা আছে ঐতিহাসিক ছয় দফার তথ্য-উপাত্ত। আর অপর পাশে তুলে আনা হয়েছে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পাঁচবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবন। জাতির পিতাকে সপরিবার হত্যার পর ১৯৭৫ থেকে তিনি কাটিয়েছেন নির্বাসিত জীবন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরার পর একই সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করে দলকে সুসংগঠিত করেছেন। বাঙালির ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গড়ে তুলেছেন দুর্বার গণতান্ত্রিক আন্দোলন। অবশেষে বঙ্গবন্ধু হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর আবার জনগণের রায়ে দলকে নিয়ে গেছেন রাষ্ট্রক্ষমতায়। তাঁর এই সংগ্রামী জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পর্বগুলো তুলে আনা হয়েছে এখানে। বঙ্গবন্ধুকন্যার দূরদর্শিতা ও সাহসী নেতৃত্বে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
তথ্যবহুল এই সংবাদচিত্র প্রদর্শনীটি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জয়ীতা প্রকাশনীর সহযোগিতায় আয়োজন করা হয়েছে। চলবে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত।