আমরা সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে চাই: প্রধানমন্ত্রী

Chapai Chapai

Tribune

প্রকাশিত: ৮:২৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২২, ২০২৪

ট্রিবিউন ডেস্ক: যুদ্ধে অস্ত্র ও অর্থ ব্যয় না করে সে টাকা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যয় করা হলে বিশ্বটা রক্ষা পেতো বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ন্যাশনাল এডাপশন প্ল্যান (এনএপি) এক্সপো ২০২৪ এবং বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপের (বিসিডিপি) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি করণীয় ছয়টি পরামর্শ তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে চাই। এ জন্য প্রয়োজন অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, সহিষ্ণুতা শক্তিশালী করা এবং ঝুঁকি মোকাবিলায় সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা। আমি সংক্ষেপে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরছি।

প্রথমত, প্রধান কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোকে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে তাদের নির্গমন হ্রাস করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, উন্নত দেশগুলোর দ্বারা জলবায়ু তহবিলের বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে। অভিযোজন প্রশমনের মধ্যে তা সমানভাবে বণ্টন করতে হবে।
তৃতীয়ত, উন্নত দেশগুলোকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রযুক্তি হস্তান্তরের পাশাপাশি সবচেয়ে কার্যকর জ্বালানি সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।
চতুর্থত, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের সময় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলো তাদের ক্ষতি অনুসারে বিবেচনা করা উচিত।
পঞ্চমত, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদী ভাঙন, বন্যা এবং খরার কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব সব দেশকে ভাগ করে নিতে হবে।
সবশেষে প্রধান অর্থনীতিসমূহকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় বাংলাদেশ সবসময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। আসুন সকলকে সাথে নিয়ে আমরা ধরিত্রী রক্ষায় আরো নিবিড়ভাবে কাজ করি। সেই সাথে একটি কথা না বলে পারছি না, এই যুদ্ধে অস্ত্র ও অর্থ ব্যয় না করে সে টাকা এই জলবায়ু পরিবর্তনে যদি ব্যয় করা হতো, তবে বিশ্বটা রক্ষা পেত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে আমাদের অবদান ০.৪৮ শতাংশের কম হলেও এর নেতিবাচক প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব আমাদের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। অব্যাহত বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্র তলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল যা দেশের মোট আয়তনের ১২ থেকে ১৭ ভাগ এই শতাব্দীর শেষ দিকে সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমরা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫° সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখতে উন্নত বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। আমরা শর্তহীন ৬.৭৩ এবং শর্ত যুক্ত ১৫.১২ ভাগ গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। বাংলাদেশে আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করেছি যাতে গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কম হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন এবং গ্রামাঞ্চলে ৪৫ লাখেরও বেশি উন্নত চুলা বিতরণ করা হয়েছে। আমরা ২০১৪ সালে মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারেটি প্ল্যান এমসিপিপি প্রণয়ন করেছি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করে বিপদাপন্ন থেকে সহিষ্ণুতা ও সহিষ্ণুতা থেকে সমৃদ্ধি পর্যায়ে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা ম্যাপ ২০২২ থেকে ২০৫০ প্রণয়ন করেছে।
এ পরিকল্পনায় আমরা এগারোটি জলবায়ু ঝুঁকিযুক্ত এলাকাকে আটটি খাতে ১১৩টি অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রম চিহ্নিত করেছি। আগামী ২৭ বছর ম্যাপের কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য আমাদের প্রায় ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। সুনির্দিষ্ট তহবিল ও অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা গ্রহণে আমি ধনী দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ন্যাপ এক্সপো ২০২৪ এবং বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ বিসিডিপির শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।

পোস্টটি শেয়ার করুন