উড্ডয়নের অপেক্ষায় বাংলাদেশে তৈরি প্রথম রকেট

Chapai Chapai

Tribune

প্রকাশিত: ৩:৫৪ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩

ট্রিবিউন ডেস্ক: রকেট আবিস্কার করে দেশজুড়ে চমক সৃষ্টি করেছেন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের একদল স্বপ্নবাজ তরুণ শিক্ষার্থী। র্দীঘ গবেষনায় তারা রকেট আবিস্কারের প্রথম ধাপে সফল হলেও এখন প্রয়োজন সরকারের সহযোগীতা ও অনুমতি। তবেই উৎক্ষেপন হবে দেশের আকাশের প্রথম এই রকেট।

এই স্বপ্নবাজ তরুনদের দলনেতার নাম মো: নাহিয়ান আল রহমান ওরফে ওলি। সে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ইলেক্টিক্যাল এন্ড ইলেক্টনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের (ইইই) শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ী গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা।

জানা যায়, ছোট বেলা থেকেই বিমান ও রকেট আবিস্কারের নেশা ছিল নাহিয়ান আল রহমান ওলির। সে সময় এই স্বপ্নের ডানা না মেললেও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ভর্তি হবার পর তাঁর স্বপ্ন ডানা মেলতে শুরু করে। ফলে সহপাঠী বন্ধু নিয়ামুল ইসলামের কাছে তাঁর স্বপ্নের জানান দেয় ওলি। এতে সায় দেয় নিয়ামুলও। শুরু হয় রকেট বানানো গল্প। তখন সময় ২০১২ সাল।

এরপর তারা দেশ-বিদেশের পরিচিত বড় ভাই-বন্ধুদের কাছ থেকে রকেট সংক্রান্ত বই সংগ্রহ শুরু করে তারা। এভাবে তারা প্রায় চার শতাধিক বই গবেষনা করে সংগ্রহ শুরু করে প্রয়োজনীয় যত সব যন্ত্রপাতি। কিন্তু মাঝ পথে এসে টাকা অভাবে ছিটকে পড়ে তারা। এতেও থমেনি এই স্বপ্নবাজ তরুনরা।

এরপর ২০১৯ সালে ফের ব্যক্তিগত ভাবে টাকা সংগ্রহ করে ২০ জনের দল নিয়ে আলফা সায়েন্স ল্যাবের মাধ্যমে শুরু হয় রকেট তৈরীর কাজ। এভাবেই ২০২১ সালের শেষ দিকে এসে তারা রকেট তৈরীর কাজ শেষ করে। কিন্তু এখন প্রয়োজন সরকারের সহযোগীতা ও অনুমতি। তবেই সম্ভব এই স্বপ্নের রকেট আকাশে উৎক্ষেপন।

ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইলেক্টিক্যাল এন্ড ইলেক্টনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক মো: আ: ওয়াহিদ জানান, র্দীঘ প্রচেষ্টায় এই রকেট আবিস্কার করেছে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এই রকেট আকাশে উৎক্ষেপন করতে হলে প্রয়োজন সরকারী বরাদ্ধ ও অনুমতি।

তিনি আরও জানান, অধিদপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এখন সেখান থেকে অনুমতি পেলে সেই চিঠি যাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ে। এই জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাই মূখ্য। তবে আমরা আশা করছি দেশের স্বার্থে সরকার এই স্বপ্নবাজ তরুনদের পাশে দাঁড়াবে।

নাহিয়ান আল রহমান ওরফে ওলি জানান, প্রাথমিক ভাবে আমরা ৬ ফুট ও ১০ ফুট উচ্চতার দুটি প্রোটো টাইপ ৪টি রকেট তৈরী করেছি। এর মধ্যে একটির নাম ধূমকেতু-ওয়ান। এর ফোর্স প্রায় দেড়শত নিউটন। অপরটির নাম ধূমকেতু-টু’। এর ফোর্স চারশ নিউটন। এটির রেঞ্জ প্রায় ৫০কিলোমিটার এবং ধূমকেতু-ওয়ানের রেঞ্জ প্রায় ২০ কিলোমিটার।

ওলি আরও জানান, স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপে আছি। যেদিন সরকারের অনুমতি নিয়ে এই রকেট উৎক্ষেপন করতে পারব তখন এই স্বপ্ন সফলতা পাব বলে আশা করছি। তবে স্বপ্ন শতভাগ স্বার্থক হবে যদি এই রকেট উৎক্ষেপনের পর সফল ভাবে ভূ-পৃষ্টে নামাতে পারি। এজন্য সরকারের সহযোগীতা মূখ্য। সেই সাথে বাংলার আকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের মাধ্যমে আমরা এই স্বপ্নের পূর্নতা দেখতে চাই।

কলেজ সূত্র জানায়, এর আগেও আলফা সায়েন্স ল্যাবের এই শিক্ষার্থীদের এই টিম একাধিক রোবোটিক্স প্রজেক্টে সফল হয়েছে। এতে তারা ২০১৯ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত টেকফেস্ট নির্বাচনী পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়। পরে তারা ভারতের বিখ্যাত আই.আই.টিতে অনুষ্ঠিত টেকফেস্টে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। সেখানেও তারা শীর্ষ-৫ এ জায়গা করে সেমিফাইনালিস্ট হবার গৌরব অর্জন করে।

এবিষয়ে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ মো: আলমগীর কবীর বলেন, রকেট আবিস্কারের বিষয়টি দেশের জন্য আশা জাগানিয়া একটি বার্তা। তবে এখন এটি সফল উৎক্ষেপনের জন্য সরকারের অনুমতি প্রয়োজন। খুব দ্রুত এ সংক্রান্ত চিঠি সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রেরণ করা হবে। আশা করছি এর মধ্য দিয়ে দেশে আবিস্কারের নতুন অধ্যায় সূচিত হবে।

পোস্টটি শেয়ার করুন